নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in :পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি বাংলার গ্রামাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এক বিশেষ দিন — পড়ুয়া অষ্টমী। এই দিনটি শুধু ধর্মীয় নয়, এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু কখন, কীভাবে, কোথা থেকে শুরু হয়েছিল এই পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি? আজকের প্রতিবেদনে জানব সেই গল্প — যেখানে মিশে আছে বিশ্বাস, কৃষি, মাতৃত্ব ও গ্রামীণ সমাজের গভীর অনুভূতি।
এই লিংকে ক্লিক করে এ বছরে অষ্টম এর তারিখ দেখে নিতে পারবেন :- ২০২৫ সালে পড়ুয়া অষ্টমী কবে পড়েছে: গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও পূজার সঠিক বাংলা তারিখ জানুন এখানে Parua Astami 2025 Date Bengali Festival
পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি : বাংলার মাটির গন্ধে ভরা এক প্রাচীন ঐতিহ্য
পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি নিয়ে গ্রামবাংলার মানুষ নানা কাহিনি বলেন। কথিত আছে, একসময় কৃষিকাজ নির্ভর জীবনের সঙ্গে যুক্ত ছিল নানা দেবদেবীর আরাধনা। মা অন্নপূর্ণা ও মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ কামনায় কৃষাণ পরিবারে প্রথম সন্তান জন্মালে, সেই শিশুর মঙ্গলকামনায় পালিত হত এই দিন। এভাবেই জন্ম নেয় “পড়ুয়া অষ্টমী” — যেখানে “পড়ুয়া” মানে প্রথম সন্তান, আর “অষ্টমী” মানে আশীর্বাদের দিন।
প্রাচীন বাংলায় পড়ুয়া অষ্টমীর উৎপত্তির পেছনের ধর্মীয় তাৎপর্য
ধর্মীয় দৃষ্টিতে পড়ুয়া অষ্টমীর উৎপত্তি মা দুর্গার আশীর্বাদপ্রাপ্ত সন্তানদের উদ্দেশ্যে এক কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। বিশ্বাস করা হয়, অষ্টমী তিথিতে মা দুর্গা বা মা পার্বতী সন্তানদের দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি দান করেন। তাই গ্রামের প্রতিটি মা এই দিন উপবাস রাখেন, সন্তানদের কপালে সিঁদুর, দূর্বা ও আশীর্বাদ দেন।
পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি কবে থেকে শুরু — গ্রামীণ মহিলাদের মুখে শোনা গল্প
গ্রামীণ মহিলাদের মুখে শোনা যায়, বহু প্রাচীন কাল থেকেই বাংলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলে এই রীতি চলে আসছে। আগে ঘরে ঘরে যখন নবধান ওঠত, তখন সেই নতুন ধান দিয়েই প্রথম সন্তানকে “অন্নপ্রাশন” করানো হত এই অষ্টমীর দিনে। সেই প্রথাই আজও টিকে আছে কিছু এলাকায়, যদিও সময়ের সঙ্গে রূপ বদলেছে।
লোকসংস্কৃতিতে পড়ুয়া অষ্টমীর স্থান
বাংলার লোকসংস্কৃতিতে পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি এক গভীর আবেগের বিষয়। এই দিনে গ্রামে গ্রামে মেয়েরা নতুন শাড়ি পরে, বাড়ির উঠোনে আলপনা আঁকে, এবং প্রথম সন্তানকে আশীর্বাদ দেয় “তুমি দীর্ঘজীবী হও, মা দুর্গার কৃপা থাকুক তোমার উপর।” এই প্রথা শুধু ধর্মীয় নয়, পারিবারিক বন্ধনের প্রতীক।
পড়ুয়া অষ্টমীর উৎপত্তি ও কৃষিজীবনের যোগসূত্র
গ্রামীণ জীবনে কৃষির সঙ্গে এই উৎসবের গভীর সম্পর্ক আছে। ধান তোলা, ক্ষেতের কাজ শেষ হওয়ার পর অষ্টমীর এই রীতিটি ছিল কৃষকের আনন্দ প্রকাশের দিন। তাই অনেক সময় পড়ুয়া অষ্টমীকে বলা হয় “ফসল আশীর্বাদের দিন”। অর্থাৎ এই দিনেই মা প্রকৃতির কাছে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হত।
পড়ুয়া অষ্টমী নিয়ে পুরাণ ও লোকবিশ্বাস
অনেক পুরাণে উল্লেখ আছে, মা পার্বতী অষ্টমী তিথিতে কার্তিকের জন্য বিশেষ পূজা করেছিলেন। সেই থেকেই বাঙালি মায়েরা প্রথম সন্তানের নামে অষ্টমীর দিন বিশেষ ব্রত পালন শুরু করেন। যদিও প্রামাণ্য ইতিহাসে স্পষ্ট উল্লেখ নেই, তবে লোকবিশ্বাসে এই দিনটি মা ও সন্তানের বন্ধনের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আধুনিক সময়ে পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিকতা
আজকের দিনে শহুরে জীবনে এই রীতির প্রচলন কিছুটা কমে গেলেও, গ্রামে এখনও অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়। আধুনিক মা-রা এই উৎসবের মধ্যে খুঁজে পান শিকড়ের গন্ধ, পরিবারের ঐতিহ্য ও সন্তানপ্রেমের প্রতীক। সময়ের সঙ্গে এর রূপ পাল্টেছে, কিন্তু মূল বিশ্বাস এখনো একই — সন্তানের মঙ্গল ও মায়ের আশীর্বাদ।
পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি থেকে জানা যায় — এটি শুধু উৎসব নয়, এক সামাজিক শিক্ষা
এই উৎসব আমাদের শেখায় মা ও সন্তানের সম্পর্কের পবিত্রতা, সমাজে নারীর ভূমিকা, এবং পরিবারে ঐক্যের গুরুত্ব। তাই পড়ুয়া অষ্টমীর ইতিহাস ও উৎপত্তি কেবল একটি তারিখ বা তিথি নয়, এটি বাংলার জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি।
তালিকা: পড়ুয়া অষ্টমীর সঙ্গে যুক্ত কিছু প্রধান বিশ্বাস
| বিষয় | অর্থ |
|---|---|
| প্রথম সন্তানকে “পড়ুয়া” বলা হয় | শুভ ও পূর্ণতা সূচক |
| মা দুর্গার আরাধনা | সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনা |
| ধান ও গুড়ের ব্যবহার | সমৃদ্ধির প্রতীক |
| অষ্টমী তিথি পালন | পবিত্রতা ও আশীর্বাদের সময় |
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
পড়ুয়া অষ্টমীর উৎপত্তি কবে থেকে শুরু?
এই উৎসবের নির্দিষ্ট সময় জানা না গেলেও ধারণা করা হয় প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজে, যখন সন্তান জন্ম এক আশীর্বাদ মনে করা হত, তখন থেকেই শুরু।
পড়ুয়া অষ্টমী কেন পালন করা হয়?
প্রথম সন্তানের মঙ্গল ও মা দুর্গার আশীর্বাদ কামনায় এই অষ্টমী পালিত হয়। এটি মাতৃত্ব ও সন্তানপ্রেমের উৎসব।
আধুনিক কালে পড়ুয়া অষ্টমীর তাৎপর্য কী?
আজও এই রীতি আমাদের পারিবারিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জীবিত রাখে। শহরেও অনেকেই প্রতীকীভাবে পালন করেন।


























