নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in : ছট পূজা উপবাস ও নিয়ম (Chhath Puja Vrat Vidhi & Rules)
ছট পূজার সূচনা ও তাৎপর্য
কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠীর পবিত্র তিথিতে শুরু হয় এক প্রচলিত উৎসব— ছট পূজা। ৪ দিন ধরে চলে এই উপাসনা-অনুষ্ঠান, যেখানে পরিবারের সকল সদস্য—নারী-পুরুষ, বড়-ছোট—এই ব্রতে অংশ নেন। বিশেষ করে সন্তানদের সুস্বাস্থ্য, সফলতা ও দীর্ঘায়ুর লক্ষ্যে পালন করা হয় এই উপাসনা। এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব “ছট পূজা উপবাস ও নিয়ম (Chhath Puja Vrat Vidhi & Rules)” বিষয়টি, যাতে আপনি সম্পূর্ণ ধারাবাহিকভাবে বুঝে নিতে পারেন এই পূজার পঠন-পাঠন ও ব্রতের নিয়মাবলী।
ছট পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য
ছট পূজার উৎস অনেক প্রাচীন। বলা হয় বৈদিক যুগ থেকেই সূর্য দেবের আরাধনা চলেছে, আর সেই ধারাতে বিকাশ পেয়েছে এই উৎসব। “ছট” শব্দটি সম্ভবত “ষষ্ঠী” থেকে উৎপত্তি—যেমন শাস্ত্রে রয়েছে, শুক্লা ষষ্ঠীর দিনেই এই পূজা শুরু হয়। এছাড়া এক দৃষ্টান্তে বলা হয়, সূর্যদেবের পত্নী ঊষা-প্রত্যুষাকে ‘ছোটি মাইয়া’ বলা হয়, তিনি আরাধ্য, তাই নাম ছট।
এই উৎসব শুধু রীতি নয়, মানব-জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। উপবাস, নিরামিষ আহার, ডালাপানি ও নদীর ঘাটে সূর্যাস্ত-উদয়ের দৃশ্য—সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক অদ্ভুত ভাবমূর্তি, যা সামান্য উৎসব নয়, বরং এক ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান।
ছট পূজা-উপবাসের ধরণ ও ধাপ
উপবাসে অনেক ধাপ রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে ব্রত পূর্ণতা পায়। এখানে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো—
প্রথম দিন — ব্রত রোস্ট শুরু
- প্রথম দিন স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হয়।
- বাসায় নিয়ে সব উপকরণ জোগাড় করে “খারনা” নামে আয়োজিত হয়। ওই সময় নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয়—খাওয়া হয় পায়েস, লুচি, কলা, মিষ্টি।
দ্বিতীয় দিন — নদীর ঘাটে উপাসনা ও উপবাস শুরু
- উপবাসীদের নদীর ঘাটে গিয়ে স্নান করতে হয়, পরিধেয় শুদ্ধ কাপড় হয়।
- পানি কোমর সমান বা অন্তত কিছুটা নিচু হতে হয়।
- বসে একাগ্রচিত্তে সূর্য দেবকে ধ্যান ও আরাধনা করা হয়, নদীর জলে নামা হয়, ধূপ-প্রদীপ আরতি দেওয়া হয়।
তৃতীয় ও চতুর্থ দিন — উপবাস পূর্ণতা ও ভঙ্গ
- উপবাসকারী ভোরে আবার ঘাটে যান, উদয়গামী ও অস্তগামী সূর্যকে প্রণাম করেন।
- ঘাটে বা নদীতে জলে দাঁড়িয়ে ডালায় রাখা প্রসাদ অর্পণ করা হয়।
- শেষভাগে নদীতে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
- উপবাস ভঙ্গ হয় পারিবারিকভাবে শুভ মুহূর্তে।
“ছট পূজা উপবাস ও নিয়ম (Chhath Puja Vrat Vidhi & Rules)” অনুসরণ করুন এই নির্দেশিকা
নিচে দেওয়া হলো “ছট পূজা উপবাস ও নিয়ম” অনুসরণের জন্য এক সংক্ষিপ্ত তালিকা—
- নিয়ম ১: উপবাস শুরু করার আগে স্নান ও শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান।
- নিয়ম ২: নিরামিষ খাদ্য নির্বাচন করুন; পেঁয়াজ-রসুন এড়িয়ে চলুন।
- নিয়ম ৩: নির্ধারিত সময়ে নদীর ঘাটে গিয়ে সূর্য আরাধনা ও জলস্নান।
- নিয়ম ৪: ডালায় প্রসাদ, ফল, ফুল এবং প্রদীপ সাজিয়ে রাখুন।
- নিয়ম ৫: নির্ধারিত সময় পার হয়ে উপবাস ভঙ্গ করুন।
উপকরণ ও প্রস্তুতির তালিকা
আপনার প্রস্তুতিকে সহজ করতে নিচে একটি টেবিল দেওয়া হলো—
| উপকরণ | উদ্দেশ্য |
|---|---|
| আমের পল্লব | পূজার আলংকারিকতা বৃদ্ধি |
| হলুদ গাছ | শুভতার প্রতীক |
| কলার কাঁদি | ফল হিসেবে ও প্রদ্যমানতার জন্য |
| নারকেল | পূজার আনুষ্ঠানিকতা |
| ফলাদি (বিভিন্ন) | ধন্যতা ও আজকের উপকরণ হিসেবে |
| ঠেকুয়া, লাড্ডু | প্রসাদের অংশ |
| ফুল, ধূপ-ধুনা | আরাধনার পরিবেশ তৈরি |
| প্রদীপ | অন্ধকার থেকে আলোর প্রতীক |
এই টেবিলের মাধ্যমে আপনি নিজেই প্রস্তুতি নিতে পারবেন, যাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাদ না পড়ে।
Frequently Asked Questions (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)
প্রশ্ন ১: শুধু মহিলারাই কি এই ব্রতে অংশ নিতে পারেন?
উত্তর: নয়। যদিও প্রচলিতভাবে মহিলারা অধিক অংশগ্রহণ করে থাকেন, এই ব্রত নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই খোলা।
প্রশ্ন ২: কি পরিমাণ সময় উপবাস রাখতে হবে?
বিশ্বাস অনুযায়ী ৩৬ ঘন্টা নিয়ম করে উপবাস পালন করা হয়। তবে শারীরিকভাবে অসুবিধা হলে প্রয়োজন হয় চিকিৎসকের পরামর্শ।
প্রশ্ন ৩: নদীর ঘাটে গেলে কি বিশেষ কোনো নিয়ম আছে?
হ্যাঁ। নদীর ঘাটে বসলেই জলে নামার আগে শুদ্ধ স্নান করা জরুরি। সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী কোমর-সমান বা তার নিচের পানিতে নামা হয়।
শেষ কথা
“ছট পূজা উপবাস ও নিয়ম (Chhath Puja Vrat Vidhi & Rules)” অনুসরণ করলে এই পবিত্র উৎসবের সার্থকতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। শুদ্ধ মন ও উদ্দেশ্যে যদি উপাসনা করা হয়, তাহলে সূর্য দেবতা আর তাদের স্ত্রীরা দয়া করেই আশীর্বাদ দেন বলেই প্রচলিত বিশ্বাস। আগামী কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠীতেই এই ব্রতে অংশ নিতে হয়—সেই উপলক্ষে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন, উপবাস-ব্রত চর্চার সূচনা করুন এবং সুন্দর মনের সঙ্গে এই উৎসবকে উদ্যাপন করুন।


























