নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in : নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কৌশল প্রতিদিন নতুন মোড় নিচ্ছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা ধরে ধরে পর্যালোচনা বৈঠক করছেন। কোথাও সাফল্যের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা হচ্ছে, আবার কোথাও ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। একমাত্র উদ্দেশ্য— উত্তরবঙ্গের জমিতে আরও বেশি করে ঘাসফুল ফোটানো।
উত্তরবঙ্গে কেন এত গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল?
উত্তরবঙ্গের ৭টি সাংগঠনিক জেলা— কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং (সমতল), দুই দিনাজপুর ও মালদহ— মিলিয়ে রয়েছে মোট ৪৪টি বিধানসভা আসন। এর মধ্যে ২০২১ সালে তৃণমূলের হাতে ছিল ২৪টি, কিন্তু গত লোকসভায় নেমে আসে ২০-তে। এই ক্ষত মেরামতের জন্যই চলছে একের পর এক বৈঠক।
এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গত কয়েক বছরে অন্তত ১৫ বার সফর করেছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা।
জেলা ধরে ধরে অভিষেকের বার্তা
কোচবিহার
২০১৯ সালে বিজেপি দখল করেছিল কোচবিহার, কিন্তু ২০২৪ সালে সেখানে পাল্টে যায় ছবি। তৃণমূল ৫টি বিধানসভায় এগিয়ে। অভিষেকের নির্দেশ— সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও শক্ত করতে হবে বুথস্তরের সংগঠন।
জলপাইগুড়ি
বিজেপি যদিও লোকসভা ধরে রেখেছে, কিন্তু জয়ের ব্যবধান অর্ধেকেরও কম হয়েছে। তৃণমূলের ভোট বেড়েছে ৫ শতাংশ। অভিষেক বিশেষভাবে বলেছেন, জনজাতি ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে সরকারের প্রকল্প আরও ছড়িয়ে দিতে হবে।
আলিপুরদুয়ার
২০২১ সালে পাঁচে পাঁচ নিয়েছিল বিজেপি, কিন্তু তৃণমূল ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মাদারিহাটে জয়ের পর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। অভিষেক বলেছেন, বুথ ধরে কাজ করলে বিধানসভায় ফল ঘুরে যাবে।
দার্জিলিং (সমতল)
এখনও ঘাসফুল ফোটেনি। তিনটি আসনেই বিজেপির দখল। অভিষেক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন— পুরনো কর্মীদের দূরে সরিয়ে রাখলে চলবে না, সাংগঠনিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
উত্তর দিনাজপুর
লোকসভায় বিজেপির দাপট থাকলেও বিধানসভায় তৃণমূল বেশিরভাগ আসন ধরে রেখেছে। অভিষেক বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রায়গঞ্জ শহরের ফলাফল দেখে দলকে আরও আত্মসমালোচনা করতে হবে।
দক্ষিণ দিনাজপুর
বালুরঘাটে ব্যবধান মাত্র ১০ হাজারের কিছু বেশি। অভিষেক বলেছেন, সামান্য মনোযোগ দিলেই এই আসন জেতা যেত। তাই বিধানসভা ভোটের আগে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামতে হবে।
মালদহ
এখানেই গোষ্ঠীকোন্দল সবচেয়ে বড় সমস্যা। তৃণমূল একাধিক আসনে জিতলেও লোকসভায় হার মানতে হয়েছে। অভিষেক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন— দ্বন্দ্ব ভুলে বুথ সংগঠনকে শক্ত করতে হবে।
তৃণমূলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
- গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো
- বুথ ধরে সংগঠন শক্ত করা
- সীমান্ত ও পাহাড়ি রাজনীতির সমীকরণ সামলানো
- সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প আরও বেশি প্রচার করা
উত্তরবঙ্গের ৭ জেলার বিধানসভা আসন
| জেলা | মোট আসন | ২০২১-এ তৃণমূল | বিজেপি | ২০২৪ লোকসভা নিরিখে তৃণমূল এগিয়ে |
|---|---|---|---|---|
| কোচবিহার | 9 | 3 | 6 | 5 |
| জলপাইগুড়ি | 7 | 3+1 (উপনির্বাচন) | 4 | বেড়েছে |
| আলিপুরদুয়ার | 5 | 0 | 5 | 1 |
| দার্জিলিং (সমতল) | 3 | 0 | 3 | 0 |
| উত্তর দিনাজপুর | 9 | 7 | 2 | মিশ্র ফল |
| দক্ষিণ দিনাজপুর | 6 | 3 | 3 | প্রায় সমান |
| মালদহ | 12 | 8 | 4 | লোকসভায় পিছিয়ে |
নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কৌশল এখন রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ। জেলার পর জেলা ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে পর্যালোচনা চালাচ্ছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে— বুথস্তরে সংগঠনকে শক্ত করা, বিভাজন মেটানো এবং উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচারই হবে আসল অস্ত্র। এখন দেখার, ২০২৬-এর ভোটে উত্তরবঙ্গ আসলেই ঘাসফুলে ভরে ওঠে কি না।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কৌশল নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কৌশল কেন এত আলোচিত?
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল উত্তরবঙ্গে বুথভিত্তিক সংগঠন জোরদার করছে। গত কয়েকটি ভোটে এই অঞ্চলের ফলাফল ওঠানামা করেছে, তাই দলীয় নেতৃত্ব চাইছে প্রতিটি জেলায় ঘাসফুলকে আরও শক্ত মাটিতে দাঁড় করাতে।
কোন কোন জেলায় নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কৌশলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং (সমতল), দুই দিনাজপুর ও মালদহকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ এই ৭টি জেলায় মিলিয়ে মোট ৪৪টি বিধানসভা আসন রয়েছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে এই কৌশল বাস্তবায়ন করছেন?
তিনি জেলা ধরে ধরে বৈঠক করছেন, প্রতিটি বুথের ভোটের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখছেন এবং ত্রুটি চিহ্নিত করে আলাদা করে নির্দেশ দিচ্ছেন। পাশাপাশি সংগঠনের ঐক্য বজায় রাখতে ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমাতে বিশেষ জোর দিচ্ছেন।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কৌশলের বড় চ্যালেঞ্জ কী?
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমানো এবং সংগঠনকে বুথভিত্তিক স্তরে শক্ত করা। সেই সঙ্গে পাহাড়ি রাজনীতির জটিল সমীকরণ সামলানোও গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের প্রকল্প প্রচারের ভূমিকা কীভাবে দেখা হচ্ছে?
অভিষেক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পই হবে আসল হাতিয়ার। উত্তরবঙ্গের মানুষ যাতে সরাসরি এই সুবিধা উপলব্ধি করেন, সেটাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কৌশল কতটা সফল হতে পারে?
২০২১ সালের তুলনায় তৃণমূলের ভোট শেয়ার অনেক জায়গায় বেড়েছে। যদি বুথস্তরের কাজে গুরুত্ব দেওয়া যায় এবং নেতৃত্বের মধ্যে ঐক্য বজায় থাকে, তবে ২০২৬-এ উত্তরবঙ্গ ঘাসফুলের পক্ষে ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারে।

























