
নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি:রথযাত্রা শেষে জগন্নাথের রথ কি করা হয় : পুরীর রথযাত্রা শুধুই একটা ধর্মীয় উৎসব নয়, ভক্তি, আচার, ইতিহাস ও রহস্যে ভরপুর এক জাগ্রত অনুভব। রথযাত্রা শেষে জগন্নাথদেবের ফেরার সময় যে ‘উল্টো রথ’ হয়, তাও এক বিশাল উৎসব। তবে, অনেকের মনে একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়—রথযাত্রা শেষ হলে জগন্নাথের রথ কি করা হয়? এই প্রতিবেদন আপনাকে জানাবে সেই অজানা তথ্য, যেটা আপনি জানলে অবাক হবেন।
রথযাত্রা শেষে জগন্নাথের রথ কি করা হয় – জানলে অবাক হবেন!
রথযাত্রা মানেই উৎসব, ভক্তির স্রোত, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়। কিন্তু যখন সেই যাত্রা শেষ হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে—রথযাত্রা শেষ হলে জগন্নাথের রথ কি করা হয়? প্রতিবার নতুন করে তৈরি হয় এই বিশাল কাঠের রথ। আর যাত্রা শেষ হলে তা নিলামে বিক্রি করা হয়! ভাবছেন, এত বড় কাঠের রথ? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ রথের চাকা থেকে শুরু করে কাঠের টুকরো পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন নিলামের মাধ্যমে।
উল্টো রথ কবে হয় এবং এর তাৎপর্য
‘উল্টো রথ’ অর্থাৎ বাহুড়া যাত্রা, মূল রথের ৮ দিন পর অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তাঁদের মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা থেকে মূল মন্দিরে ফিরে আসেন।
২০২৫ সালে উল্টো রথ পড়েছে ৫ জুলাই, যা আষাঢ় শুক্ল পক্ষের দশমী তিথি।
এই উল্টো রথেও দড়ি টানা, মেলা ও দর্শন অত্যন্ত পুণ্য লাভের কাজ বলে মনে করা হয়। ভক্তরা ঠিক ততটাই উৎসাহে অংশগ্রহণ করেন যেমন করেন মূল যাত্রার দিন।
রথ বানানো থেকে শুরু করে নিলাম – বিস্ময়কর প্রক্রিয়া
প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তৈরি হয় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কাঠের রথ—
দেবতা | রথে ব্যবহৃত কাঠ | চাকায় সংখ্যা |
---|---|---|
জগন্নাথ | ৮৩২টি | ১৬টি |
বলরাম | ৭৬৩টি | ১৪টি |
সুভদ্রা | ৫৯৩টি | ১২টি |
এই বিশাল কাঠের রথ ব্যবহারের পর তা ভেঙে ফেলা হয় না। বরং রথের অংশ নিলামে তোলা হয়। মূলত চাকা, কাঠ, দড়ি সহ নানা উপকরণ নিলামে তোলা হয় মন্দিরের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
নিলামে বিক্রি ও ব্যবহারের নিয়ম
- রথের চাকা সবচেয়ে দামী অংশ, যা প্রায় ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে নিলামে বিক্রি হয়।
- রথের অংশ কিনে তা অসৎ কাজে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- যারা রথের অংশ কিনে থাকেন, তাঁদের দায়িত্বে থাকে তা সংরক্ষণের কাজ।
এছাড়া, যা কাঠ বেঁচে থাকে, তা মন্দিরের রান্নাঘরে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ ভক্তের জন্য প্রস্তুত হয় মহাপ্রসাদ, এবং সেই রান্নার কাঠ হয় এই রথ থেকে সংগৃহীত কাঠ।
উল্টো রথের বিশেষ আচার: সুনা বেশা ও নীলাদ্রি বিজয়া
সুনা বেশা – সোনার রাজাধিরাজ সাজ
উল্টো রথের দিনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আচার হল সুনা বেশা, যাকে রাজা বেশা নামেও ডাকা হয়। এইদিন দেবতাদের সোনার অলংকারে সাজানো হয়। সোনার মুকুট, বর্ম ও গয়নায় সজ্জিত হয়ে দেবতা যেন রাজার মতো আবির্ভূত হন।
নীলাদ্রি বিজয়া – দেবদেবীর গৃহপ্রবেশ উৎসব
উল্টো রথ শেষে হয় নীলাদ্রি বিজয়া, অর্থাৎ মন্দিরে পুনরাগমন। এইসময় দেবতারা জয়-বিজয় দ্বার দিয়ে প্রবেশ করেন এবং নিজ নিজ আসনে ফিরে যান। কিন্তু এর আগে হয় এক দারুণ ঘটনা—
দেবী লক্ষ্মী অভিমান করেন কারণ জগন্নাথ তাঁকে না জানিয়েই ৮ দিন বাইরে ছিলেন। তাই জগন্নাথ তাঁকে মিষ্টি নিবেদন করে খুশি করার চেষ্টা করেন। তারপরই অনুমতি পান মন্দিরে প্রবেশের।
নীলাদ্রি বিজয়াই মূলত রথযাত্রার শেষ আনুষ্ঠানিকতা।
রথযাত্রা শেষ হলে জগন্নাথের রথ কি করা হয় – সংক্ষেপে জেনে নিন
🔸 প্রতি বছর নতুন রথ তৈরি হয় নির্দিষ্ট কাঠ দিয়ে
🔸 রথ যাত্রা শেষে রথ ভেঙে তার অংশ নিলাম করা হয়
🔸 রথের চাকা সবথেকে দামী – নিলাম শুরু ৫০,০০০ টাকা থেকে
🔸 অবশিষ্ট কাঠ মন্দিরে প্রসাদ তৈরির জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়
🔸 নিলামে অংশ নিতে হলে আবেদন করতে হয় মন্দির কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে
শেষ কথা রথযাত্রা শেষে জগন্নাথের রথ কি করা হয়
রথযাত্রা শেষ হলে জগন্নাথের রথ কি করা হয় – এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে বোঝা যায়, রথ শুধু ধর্মীয় প্রতীক নয়, বরং তা এক বিশাল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ। প্রতিটি রথ বছরের পর বছর নতুন করে তৈরি হয়, আবার সমাপ্তির পর তার কাঠও পূণ্য কাজে লাগে। তাই রথ নয় শুধু বাহন, বরং রথ হয়ে ওঠে ঈশ্বরের স্পর্শে পবিত্র কাঠামো।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলি (FAQ)
রথযাত্রা শেষে জগন্নাথের রথ কী করা হয়?
রথযাত্রা শেষ হলে রথ ভেঙে তার বিভিন্ন অংশ—যেমন চাকা, কাঠ, দড়ি—নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। অবশিষ্ট কাঠ মন্দিরের রান্নাঘরে মহাপ্রসাদ তৈরিতে জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়।
রথের নিলাম কোথায় এবং কিভাবে হয়?
রথের অংশের নিলাম হয় পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। আবেদন করতে হয় মন্দিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।
রথের কোন অংশটি সবচেয়ে দামী?
রথের চাকা সবচেয়ে মূল্যবান অংশ। সাধারণত এর নিলাম শুরু হয় প্রায় ৫০,০০০ টাকা থেকে।
উল্টো রথ কবে পালিত হয়?
মূল রথের ৮ দিন পর, অর্থাৎ আষাঢ় শুক্ল দশমী তিথিতে পালিত হয় উল্টো রথ বা বাহুড়া যাত্রা। ২০২৫ সালে এটি হবে ৫ জুলাই।
উল্টো রথের দিনে কী বিশেষ আচার হয়?
উল্টো রথের দিন ‘সুনা বেশা’ নামে একটি বিশেষ সাজের আয়োজন করা হয় যেখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে সোনার অলংকারে সাজানো হয়। এছাড়াও পালিত হয় ‘নীলাদ্রি বিজয়া’, যা রথযাত্রার সমাপ্তির উৎসব।
রথযাত্রার কাঠ পুনরায় ব্যবহার করা হয় কি?
না, প্রতিবছর নতুন কাঠ দিয়ে রথ তৈরি হয়। ব্যবহৃত কাঠের নিলাম করা হয় এবং একাংশ রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।
রথের কাঠ কিনে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যায়?
না, এটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। রথের কাঠ বা চাকা কিনে তা সম্মানের সঙ্গে রাখতে হয় এবং তার অপব্যবহার করা যায় না।