নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: বছর ঘুরে আবারও চলে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—ভক্তিবিহ্বল জনস্রোতের সামনে ধীরে ধীরে গড়িয়ে আসছে জগন্নাথদেবের রথ। রথের দড়িতে টান পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন মন ছুটে যায় পুরীর পথে, কিংবা নিজের শহরের সেই ছোট্ট শোভাযাত্রার দিকে। তবে অনেকেই এখনও দ্বিধায়—চলতি বছরে রথযাত্রা ঠিক কবে? ২৭ জুন, না কি ২৮ জুন? কোন দিন থেকে তিথি শুরু হচ্ছে? সব কিছু জানুন নিচে বিস্তারিতভাবে।
রথযাত্রা ২০২৫ কবে? সঠিক তারিখ, সময় ও তিথি
২০২৫ সালে রথযাত্রা পড়েছে ২৭ জুন, শুক্রবার। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয়।
এবছর সেই তিথি শুরু হবে ২৬ জুন বিকেল ১:২৫ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭ জুন সকাল ১১:১৯ মিনিটে। অর্থাৎ, ২৭ তারিখেই রথযাত্রা পালিত হবে দেশজুড়ে।
এছাড়াও, উল্টো রথ বা বাহুড়া যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ৪ জুলাই, শুক্রবার।
চলতি বছর রথযাত্রা ২৭ না ২৮ জুন? কী বলছে পঞ্জিকা
অনেকেই গুগলে খোঁজ করছেন—“চলতি বছর রথযাত্রা কবে”। এই প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতিষ মতে বলা হচ্ছে, দ্বিতীয়া তিথির মধ্য ভাগ ২৭ তারিখে পড়ায় সেদিনই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। যদিও তিথি শুরু হচ্ছে আগের দিন, ২৬ জুন, কিন্তু সেটি পড়ছে বিকেলে। ফলে রথ টানার শুভ মুহূর্ত পড়েছে ২৭ তারিখেই।
রথযাত্রার মাহাত্ম্য ও ইতিহাস
এই উৎসব কেবল ভক্তির প্রকাশ নয়, এর পেছনে রয়েছে গভীর ধর্মীয় তাৎপর্য। পুরাণ মতে, এই দিনেই ভগবান জগন্নাথদেব তাঁর বড় ভাই বলরাম এবং বোন সুভদ্রাকে নিয়ে বের হন গুন্ডিচা মন্দিরে—যা মাসির বাড়ি নামে পরিচিত। এই রীতির নাম ‘গুন্ডিচা যাত্রা’।
বিশ্বাস করা হয়, একবার রথের দড়ি টানলেই পুণ্যলাভ ও মোক্ষ লাভ হয়। তাই রথ টানা শুধু এক ধর্মীয় অনুশীলন নয়, আত্মশুদ্ধির এক গভীর পথ।
রথযাত্রার মূল আকর্ষণ কোনগুলো?
এই উৎসবের সবচেয়ে বড় চমক তিনটি বিশাল রথ। প্রতিটি রথেরই রয়েছে আলাদা নাম ও তাৎপর্য। এই তিনটি রথ হলো—
● নন্দীঘোষ – ভগবান জগন্নাথদেবের রথ
● তালধ্বজ – বলরামের রথ
● দর্পদলন বা পদ্মধ্বজ – সুভদ্রার রথ
এই রথগুলি পুরোপুরি কাঠ দিয়ে তৈরি হয়, যা প্রতিবছর নতুন করে নির্মাণ করা হয়। তার উপর নানা রঙের কাপড়, ফুল, অলংকার ও ডিজাইন দিয়ে সাজানো হয়। লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই রথের দড়ি টানতে ছুটে আসেন পুরী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
চলতি বছরে রথযাত্রা ২৭ না ২৮ জুন? কী বলছে রাজপরিবারের ছোঁয়া ও ‘ছেরা পহরা’
পুরীর রথযাত্রা আরও এক কারণে বিশেষ। এখানে গজপতি রাজা নিজ হাতে পালন করেন এক গুরুত্বপূর্ণ আচার—‘ছেরা পহরা’।
এই আচার অনুযায়ী, রাজা সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথের পথ ঝাঁট দেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, ঈশ্বরের সেবায় রাজা ও প্রজা সমান। এই অনুষ্ঠানিকতা শুধুমাত্র রাজপ্রাসাদ নয়, সামাজিক সাম্যের বার্তা বহন করে।
রথযাত্রার সূচি (২০২৫)
রথযাত্রা উপলক্ষে | সময় ও তারিখ |
---|---|
দ্বিতীয়া তিথি শুরু | ২৬ জুন ২০২৫, বিকেল ১:২৫ মিনিট |
দ্বিতীয়া তিথি শেষ | ২৭ জুন ২০২৫, সকাল ১১:১৯ মিনিট |
মূল রথযাত্রা | ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার |
উল্টো রথ (বাহুড়া যাত্রা) | ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার |
কেন এই প্রশ্ন—”চলতি বছর রথযাত্রা ২৭ না ২৮ জুন”?
এ বছর তিথির শুরুর ও শেষের সময় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে অনেকের মনে। কারণ তিথি শুরু হচ্ছে ২৬ তারিখে বিকেল থেকে এবং শেষ হচ্ছে ২৭ তারিখ সকালেই। ফলে অনেকেই ভেবেছেন ২৮ তারিখ হবে রথযাত্রা। কিন্তু পঞ্জিকা অনুসারে, মূল পূজা ও রথ টানা হবে ২৭ তারিখেই।
তাই এক কথায় উত্তর—চলতি বছর রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জুন, শুক্রবার।
এক নজরে রথযাত্রার দার্শনিক দিক
- ভগবান স্বয়ং ভক্তের কাছে আসছেন এই রথে চড়ে—এটাই এই উৎসবের মূল বার্তা
- রথের দড়ি টানার মাধ্যমে ভক্ত তার সমস্ত পাপ ও দুঃখ থেকে মুক্তি পান
- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেন, সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতির মূর্ত উদাহরণ হয়ে ওঠে রথযাত্রা
- এ শুধু উৎসব নয়—মানবতার, ভক্তির ও ভালোবাসার মিলনমেলা
রথযাত্রার কোথায় কখন অনুষ্ঠিত হবে কবে কোন তারিখে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হলো পুরী দিঘা মহেশ বারিপদায়:-
🌍 স্থান | 🛕 মূল রথযাত্রা দিন | 🔙 উল্টো রথ (Bahuda Yatra) দিন |
---|---|---|
পুরী | ২৭ জুন ২০২৫ (শুক্র) | ৫ জুলাই ২০২৫ |
দীঘা | ২৭ জুন ২০২৫ | রয়েছে না — স্থানে স্থানে ভিন্ন রীতিতে ফিরে যাত্রা হতে পারে |
মাহেশ | ২৭ জুন ২০২৫ | প্রায় একই সপ্তাহের শেষের দিকে, ৮ম দিনে সম্পন্ন |
বারিপদা | জুলাই মাসের প্রথম দিকে—পুরীর রথের পর ২–৩ দিনের মধ্যে | একই উৎসবের ৭–৮ দিন চলা শেষে উল্টো রথ পালন হয় |
বিস্তারিত বিশ্লেষণ ওরথযাত্রা পরীর এবং বারিপদা ও মাহেশের রথ নিয়ে :-
- পুরীর রথযাত্রা ২০২৫ সালে নিশ্চিতভাবে ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে, এবং তার ৮ দিন পর অর্থাৎ ৫ জুলাই ‘Bahuda Yatra’ হিসেবে রথ ফিরে আসবে
- দীঘা–তে নতুন জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর প্রথম রথযাত্রা একই দিন অনুষ্ঠিত হবে—২৭ জুন; তবে উল্টো রথের সাজ নেই, স্থানীয় রীতি অনুযায়ী ফেরিয়ে আনা হয় না
- মাহেশ–এ ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা ২৭ জুন পালন হবে; উল্টো রথ আয়োজিত হবে প্রায় ৭⁻৮ দিনের মধ্যে, সাধারণত সপ্তাহশেষে ।
- বারিপদা–তেও প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুযায়ী রথযাত্রা জুলাইয়ে, একই উৎসবের মধ্যেই উল্টো রথ অনুষ্ঠিত হয় ।
স্ট্যান্ডার্ড সময়:
- পুরী:
- মূল রথযাত্রা: ২৭ জুন ২০২৫
- উল্টো রথ (Bahuda Yatra): ৫ জুলাই ২০২৫
- দীঘা:
- শুধুমাত্র মূল রথযাত্রা: ২৭ জুন ২০২৫
- মাহেশ:
- মূল রথযাত্রা: ২৭ জুন ২০২৫
- উল্টো রথ: প্রায় সেই সপ্তাহের শেষের দিকে (~৮ম দিন)
- বারিপদা:
- রথযাত্রা ও উল্টো রথ: জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে
“চলতি বছরে রথযাত্রা ২৭ না ২৮ জুন?” – এর বিষয়ে মানুষের সাধারণ জিজ্ঞাসা অনুযায়ী একটি বিস্তারিত FAQ
চলতি বছরে রথযাত্রা ২৭ না ২৮ জুন – কোন তারিখে পড়ছে?
২০২৫ সালে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জুন, শুক্রবার। যদিও দ্বিতীয়া তিথি শুরু হচ্ছে ২৬ জুন বিকেল থেকে, কিন্তু প্রধান সময় পড়েছে ২৭ জুন সকালেই, তাই এই দিনেই পালিত হবে রথযাত্রা।
২০২৫ সালের রথযাত্রার তিথি কখন শুরু ও শেষ হচ্ছে?
দ্বিতীয়া তিথি শুরু হচ্ছে ২৬ জুন বিকেল ১:২৫ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭ জুন সকাল ১১:১৯ মিনিটে। এই সময়ের মধ্যেই রথযাত্রার যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
চলতি বছরে উল্টো রথ কবে পড়ছে?
২০২৫ সালে উল্টো রথ বা বাহুড়া যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ৪ জুলাই, শুক্রবার। এই দিনে জগন্নাথদেব মাসির বাড়ি (গুন্ডিচা মন্দির) থেকে ফেরত আসেন।
রথযাত্রা কেন পালন করা হয়?
রথযাত্রা মূলত ভগবান জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার শোভাযাত্রা। বিশ্বাস করা হয়, এই যাত্রা ভক্তদের কাছে ঈশ্বর স্বয়ং এসে পৌঁছন এবং রথ টানলে পুণ্য ও মোক্ষ লাভ হয়। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীকও বটে।
রথের নাম কী কী? কাদের জন্য কোন রথ?
রথযাত্রার তিনটি প্রধান রথ হল—
- নন্দীঘোষ – জগন্নাথদেবের রথ
- তালধ্বজ – বলরামের রথ
- দর্পদলন / পদ্মধ্বজ – সুভদ্রার রথ
এই রথগুলি প্রতিবছর নতুন করে কাঠ দিয়ে তৈরি হয় এবং বর্ণময় সাজে সুসজ্জিত হয়।
‘ছেরা পহরা’ কী এবং কে এটি করেন?
‘ছেরা পহরা’ হল একটি ঐতিহ্যবাহী আচার, যেখানে পুরীর গজপতি রাজা সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথের পথ ঝাঁট দেন। এটি বোঝায় যে ঈশ্বরের সেবায় সকলেই সমান—রাজা হোন বা প্রজা।
কোথায় সবচেয়ে বড় রথযাত্রা হয়?
ওড়িশার পুরীধামের রথযাত্রা সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত। তবে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের নানা প্রান্তে ছোট-বড় বহু রথযাত্রা উৎসবও পালন করা হয়।