
নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: গর্ভাবস্থার সময় মায়েদের শরীরের প্রতিটি পদক্ষেপ সন্তানের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে খাবার বাছাই করার ক্ষেত্রে সামান্য ভুলও অনেক সময় বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই প্রথম তিন মাসে কোন কোন খাবার খাবেন না বা খাবার থেকে দূরে থাকবেন, তা জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” এ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজছেন বহু মা, এবং আজকের প্রতিবেদনে তারই বিস্তারিত দিচ্ছি সহজ ভাষায়।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: গুরুত্ব কেন
গর্ভাবস্থার শুরুতে ভ্রূণের কোষ বিভাজন, হাড়ের গঠন, মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন। এই সময় অযথা খাবার খাওয়া মা ও শিশুর উভয়ের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই যেসব খাবার গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়, সেগুলি জানা এবং এড়িয়ে চলা আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত এই প্রশ্নটি যাদের মনে এসেছে, তারা জেনে নিন কোন খাবার গুলি আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল খাওয়া এড়িয়ে চলুন
গর্ভাবস্থায় চা, কফি, কোলা জাতীয় ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় কম খাওয়াই ভালো। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভপাত এবং কম ওজনের শিশুর জন্মের ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। অ্যালকোহল শিশুর বুদ্ধি বিকাশে প্রভাব ফেলে এবং গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বাড়ায়।
সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে মিঠা পানির মাছ বেছে নিন
সামুদ্রিক মাছ, বিশেষত যেগুলিতে পারদ (Mercury) বেশি থাকে, সেগুলি এড়িয়ে চলতে হবে। পারদ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার খাওয়া উচিত নয় এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় – সামুদ্রিক মাছের বদলে তাজা মিঠা পানির মাছ খাওয়াই নিরাপদ।
আধা সেদ্ধ ডিম এবং কাঁচা মাংস থেকে দূরে থাকুন
গর্ভাবস্থায় অর্ধ সেদ্ধ ডিম বা হাফ বয়েলড ডিম, আধা রান্না করা মাংস, কাঁচা মাছ খাওয়া উচিত নয়। এতে সালমোনেলা ও লিস্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এই সময়ে ভালোভাবে রান্না করা প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ করুন, কিন্তু কাঁচা বা অর্ধ রান্না খাবার এড়িয়ে চলুন।
আনারস ও কাঁচা পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলুন
অনেক সময় মা-বোনেরা জানেন না গর্ভাবস্থায় কোন ফল খাওয়া ঠিক নয়। আনারস এবং কাঁচা পেঁপে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস এই ফলগুলো থেকে দূরে থাকা ভালো।
অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত লবণ খেলে হাই ব্লাড প্রেসার এবং পানি জমে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেট স্যুপ, প্রসেসড মাংস ইত্যাদিতে সোডিয়াম ও রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার খাওয়া উচিত নয় তা বুঝতে হলে এই ধরনের খাবারগুলিকে না বলা শিখতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি এবং বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ
শুধু খাবার না, পর্যাপ্ত পানি পান এবং যথেষ্ট বিশ্রাম গর্ভাবস্থার সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে এবং শিশুর কোষ বিকাশে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত – সারসংক্ষেপ টেবিল
এড়িয়ে চলা খাবার | কারণ |
---|---|
ক্যাফেইন | গর্ভপাতের ঝুঁকি |
অ্যালকোহল | শিশুর বুদ্ধি বিকাশে প্রভাব |
সামুদ্রিক মাছ | পারদের প্রভাব |
আধা সেদ্ধ ডিম, কাঁচা মাংস | ব্যাকটেরিয়াজনিত ঝুঁকি |
আনারস, কাঁচা পেঁপে | গর্ভপাতের সম্ভাবনা |
প্রক্রিয়াজাত খাবার | সোডিয়াম ও কেমিক্যাল |
অতিরিক্ত লবণ | হাই প্রেশার ও পানি জমা |
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত – গুরুত্বপূর্ণ লিস্ট
চা, কফি ও ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়
অ্যালকোহল ও সিগারেট
সামুদ্রিক মাছ (শার্ক, সোর্ডফিশ ইত্যাদি)
আধা সেদ্ধ বা কাঁচা ডিম ও মাংস
কাঁচা পেঁপে, আনারস
প্যাকেটজাত/প্রক্রিয়াজত খাবার
অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার
কাঁচা দুধ বা পাস্তুরাইজড না করা দুধ
গর্ভাবস্থায় কী কী খাওয়া উচিত: সুস্থ সন্তানের জন্য মায়ের করণীয়
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত জানার পাশাপাশি কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত, তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় মায়ের খাদ্যাভ্যাসই ভ্রূণের সুস্থ বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে। বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে সঠিক খাবার খাওয়া শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হয়।
ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার কেন খাবেন
প্রথম তিন মাসে ফলিক অ্যাসিড ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। আখরোট, পেস্তা, ডিম, ছোলা, মুগ, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া সিড, কমলালেবু খাদ্যতালিকায় রাখলে এই পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” জানতে গিয়ে মায়েরা প্রায়শই কী খাবেন তা ভুলে যান, অথচ এই ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আয়রন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা যেমন জানা দরকার, তেমনি পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন শিশুর শরীরে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সহায়তা করে এবং রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়। পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, কলা এই সময় খাদ্যতালিকায় রাখুন। আয়রন শোষণ বাড়ানোর জন্য লেবু, কমলালেবু, আমলকি খেতে হবে।
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি’র প্রয়োজনীয়তা
গর্ভাবস্থার সময় শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। দুধ, দই, পনীর, ব্রকলি, ঢেঁড়স, কাঁটাযুক্ত মাছ, টফু, পালং শাক খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” তা জানতে গিয়ে মায়েরা প্রায়শই প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম খাওয়া ভুলে যান, তাই রোজকার খাবারে এই উপাদানগুলো রাখা জরুরি। এছাড়া রোদে কিছুক্ষণ থাকলে ভিটামিন ডি শোষণ ভালো হয়।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিনের গুরুত্ব
গর্ভাবস্থার সময় শিশুর বুদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রয়োজন। মাছ, আখরোট, চিয়া সিড, তিসি এবং বাদাম থেকে এই পুষ্টি পাওয়া যায়। পাশাপাশি ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, দুধ, ডাল থেকে প্রোটিন গ্রহণ করলে মায়ের শরীর শক্তিশালী থাকে। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” মেনে চলার পাশাপাশি এই ধরনের পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খাওয়া দরকার।
আঁশযুক্ত খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ সমস্যা। তাই বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, মুগ, শাকসবজি বেশি করে খেলে হজম ভালো থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি, প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” তা জানার পাশাপাশি, শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ করা শিশুর জন্যও উপকারী।
মায়েদের জন্য গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে কী খাবেন এবং “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” তা জানা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এই সময় মায়ের ও শিশুর সুস্থতা রক্ষা করতে পারে। তাই খাবারের তালিকা তৈরি করার সময় এড়িয়ে চলা খাবার ও খাওয়া উচিত এমন খাবার দুটি দিকই মাথায় রাখুন, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য সচেতন হোন।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: পরিবারের ভূমিকা ও সচেতনতা
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা মা জানলেও পরিবার গুরুত্ব দেয় না। বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে পরিবারের অন্যদেরও সচেতন থাকতে হবে যাতে ভুল করে মা ক্ষতিকর খাবার না খান। গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখা উচিত যা সহজে হজম হয় এবং শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। বাড়ির খাবারই সবচেয়ে নিরাপদ, তাই বাইরের ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাক্স এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থার সময় খাবার রান্নার পদ্ধতিও গুরুত্বপূর্ণ
শুধু গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা জানলেই হবে না, কীভাবে রান্না করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। মায়েদের জন্য রান্নার আগে সবজি ভালোভাবে ধুয়ে নিন, মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করুন। অর্ধেক সেদ্ধ বা হাফ বয়েলড খাবার এই সময় একদমই খাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় প্যাকেটজাত সালাদে জীবাণু থাকতে পারে, তাই কাঁচা সালাদ খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
গর্ভাবস্থায় পুষ্টি ও পানি গ্রহণের গুরুত্ব
যখন ভাবছেন গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, তখন পাশাপাশি মনে রাখবেন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের টক্সিন দূর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। যেসব ফল ও সবজিতে পানি বেশি রয়েছে, যেমন তরমুজ, শসা ইত্যাদিও খাবারে রাখতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় ফাস্টফুড কেন এড়িয়ে চলবেন?
মায়েরা প্রায়ই রাস্তার ফুচকা, চটপটি, বিরিয়ানি ইত্যাদি খাওয়ার লোভ সামলাতে পারেন না। তবে গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা জানতে গিয়ে অবশ্যই ফাস্টফুড এড়ানোর প্রয়োজন বোঝা উচিত। কারণ এগুলিতে অতিরিক্ত তেল, মশলা, এবং হাইজিনের ঘাটতি থাকে, যা পেটের সমস্যার পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় হালকা, সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া ভালো।
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর স্ন্যাক্স বাছাই করুন
অনেক সময় মা খিদে পেলেই যেটা সামনে পান সেটাই খেয়ে নেন, কিন্তু গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা মাথায় রেখে স্ন্যাক্স বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। চিপস, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্ক এড়িয়ে বাদাম, ফল, দই, ঘরে তৈরি মুড়ি-চানাচুর খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্ষুধা মিটবে, পুষ্টিও পাওয়া যাবে, এবং শিশুর বিকাশে সহায়তা করবে।
মায়ের দায়িত্ব এবং নিজের যত্ন নেওয়া
গর্ভাবস্থায় মায়েদের উচিত নিজের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি খাবার বাছাই করার সময় দায়িত্বশীল হওয়া। কী খাবেন, কী খাবেন না—দুটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” এই বিষয়টি মাথায় রেখে চললে শিশুর বিকাশ সুন্দর হবে এবং মা সুস্থ থাকবেন। মা সুস্থ থাকলে শিশুও সুস্থ থাকবে—এই ছোট্ট সত্যটিই গর্ভাবস্থার প্রতিটি দিনের প্রেরণা হয়ে উঠুক।
ডাক্তারদের মন্তব্য ও সতর্কতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থার সময় মায়েদের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ নজর দিতে হবে। WHO এবং UNICEF এর গাইডলাইনে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা মেনে চলা মায়ের এবং শিশুর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। অতিরিক্ত তেল, মশলাযুক্ত খাবার, কাঁচা দুধ এবং অর্ধসেদ্ধ খাবার খেলে খাদ্যে জীবাণু থেকে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই প্রথম তিন মাস থেকেই পরিমাণমতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলেও প্রতিটি খাবার পরিষ্কার করে ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।
মায়েদের সাধারণ ভুল
কাঁচা দুধ ও রাস্তার খাবার খাওয়ার ঝুঁকি
অনেক সময় মায়েরা গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা না বুঝেই রাস্তার ফুচকা, চটপটি বা কাঁচা দুধ খেয়ে ফেলেন। কাঁচা দুধে থাকা জীবাণু সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং রাস্তার খাবারে থাকা অতিরিক্ত তেল, মশলা এবং দূষণ মা ও শিশুর পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া এবং পেটের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার সময় এই ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত।
চাইনিজ ও ফাস্টফুড খাওয়ার ভুল
গর্ভাবস্থার সময় অনেকেই চাইনিজ খাবার, নুডলস, মোমো বা ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখেন। এগুলোতে থাকা অতিরিক্ত লবণ ও Ajinomoto শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা মেনে চলার সময় এই ধরনের খাবার এড়িয়ে সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ঘি খাওয়ার প্রবণতা
অনেক মায়ের ধারণা, গর্ভাবস্থায় বেশি ঘি খেলে বাচ্চা মোটা হবে বা নরম হবে। বাস্তবে অতিরিক্ত ঘি খাওয়া ওজন বৃদ্ধি এবং হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা ভাবতে গিয়ে অতিরিক্ত ঘি খাওয়া এড়িয়ে পরিমাণমতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া ভালো।
গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে খাবারের সম্পর্ক
গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কমানোর জন্য সঠিক খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গরম দুধ, কলা, কাজুবাদাম, ওটস, এবং হালকা গরম পানি মানসিক শান্তি আনতে এবং ঘুম ভালো হতে সহায়তা করে। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” তা মেনে চলার পাশাপাশি স্ট্রেস কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা ব্যায়াম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত কফি বা সফট ড্রিঙ্ক খেলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় স্ট্রেস বাড়ায়। তাই এই সময় এগুলো এড়িয়ে, ভেষজ চা, ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়া ভালো।
গর্ভাবস্থার মাসভিত্তিক খাবার
প্রথম ১-৩ মাসে কী খাবেন, কী খাবেন না
প্রথম তিন মাসে শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের গঠন শুরু হয়। তাই এই সময় ফলিক অ্যাসিড, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। “গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত” তা মাথায় রেখে কাঁচা দুধ, আনারস, কাঁচা পেঁপে, আধসেদ্ধ মাংস এবং রাস্তার খাবার এড়াতে হবে।
৪-৬ মাসে কী খাবেন, কী খাবেন না
এই সময় শিশুর অঙ্গ গঠন দ্রুত হয়। পর্যাপ্ত প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, শাকসবজি, বাদাম, ফল খাওয়া উচিত। চা-কফি কমিয়ে দিন এবং অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা মেনে চললে শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।
৭-৯ মাসে কী খাবেন, কী খাবেন না
এই সময় শিশুর ওজন বাড়ে এবং হাড় শক্ত হয়। দুধ, পনীর, শাক, ছোট মাছ, দই এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়া প্রয়োজন। বেশি লবণ ও মশলা, রাস্তায় কেনা খাবার এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা এই সময়েও মেনে চললে প্রসব সহজ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় নিজের এবং শিশুর সুস্থতার জন্য গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা জানা এবং অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা যেমন জরুরি, তেমনি ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলাও আবশ্যক। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে গর্ভাবস্থাকে নিরাপদ এবং সুস্থ রাখা সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত – প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?
প্রথম ৩ মাসে ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, সামুদ্রিক মাছ (যেমন সোর্ডফিশ), আধা সেদ্ধ ডিম ও মাংস, আনারস, কাঁচা পেঁপে, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা দুধ খাওয়া উচিত কি না?
না, পাস্তুরাইজড না করা কাঁচা দুধে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কাঁচা দুধ এড়িয়ে চলা উচিত।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত জানতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি কি?
হ্যাঁ, প্রতিটি মায়ের শরীরের আলাদা প্রয়োজন হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত তা বিস্তারিতভাবে জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া ঠিক আছে কি?
না, প্রথম তিন মাস আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো। কারণ এতে থাকা এনজাইম গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাওয়া উচিত?
ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ডিম, মুরগির মাংস, শাকসবজি, আখরোট, মুগ, ছোলা, ব্রকলি এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত এবং কী কী খাবার খাওয়া উচিত – এই দুটি কি একসাথে মানা দরকার?
অবশ্যই। সুস্থ মাতৃত্ব এবং শিশুর বিকাশের জন্য ক্ষতিকর খাবার এড়ানো এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দুইটাই একসাথে মানা জরুরি।
গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে না কেন?
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে পারদের মাত্রা বেশি থাকতে পারে যা শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করা কতটা জরুরি?
প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ হয় এবং শিশুর কোষ বিকাশে সহায়তা করে। তাই পর্যাপ্ত পানি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।