মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন তৈরির ঘোষণা ঘিরে তুঙ্গে উত্তেজনা বাংলার রাজনীতিতে। ধর্ম ও সংবিধান—এই দুই মেরুর টানাপোড়েনে ফের একবার মুখোমুখি তৃণমূল ও বিজেপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন তৈরির ঘোষণা ঘিরে ফের একবার রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় যেমন তৃণমূল শিবির উচ্ছ্বসিত, তেমনই বিজেপি শিবিরের কটাক্ষের তীর ধেয়ে এসেছে সরাসরি। এই ঘোষণাকে ঘিরে নতুন করে ‘হিন্দুত্ব’ বনাম ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’র লড়াই শুরু হয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহলে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন তৈরির ঘোষণা
ধর্মতলার ২১ জুলাইয়ের সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, জগন্নাথধামের পর এবার বাংলায় তৈরি হবে দুর্গা অঙ্গন। তাঁর এই ঘোষণা রাজ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আবেগকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
তবে এই উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখছে না বিজেপি। তাদের অভিযোগ, সরকার পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখা প্রয়োজন। অথচ, সরকারি তহবিল ব্যবহার করে কোনো ধর্মীয় কেন্দ্র নির্মাণ সংবিধান সমর্থন করে না।
শুভেন্দু অধিকারীর কড়া প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাফ জানিয়েছেন, সংবিধান মেনে সরকারি অর্থে কোনও ধর্মীয় মন্দির গড়া যায় না। তাঁর ভাষায়, “উনি সংবিধান পড়েননি, নিজের ধর্মও জানেন না।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরাসরি আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
এছাড়াও, জগন্নাথধামের মত স্থানকে ‘ধাম’ বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত, তাও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। সম্প্রতি জগন্নাথ মন্দিরে বাজ পড়াকে ‘অশুভ লক্ষণ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি ও আক্রমণ
মমতার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন?
তৃণমূল মুখপাত্র ঋজু দত্তের মতে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মহিলা, যিনি বহুদিন ধরে কালীপুজো করে আসছেন, জগন্নাথকে বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করেছেন এবং দুর্গাপুজোর জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনেছেন। তিনি হিন্দু নন— এই প্রশ্ন তোলা হাস্যকর।”
তৃণমূলের মতে, হিন্দুত্বের রাজনৈতিক রূপই আসল সমস্যা
বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। তাঁদের মতে, বিজেপির কিছু নেতা ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা কখনও জগন্নাথধামকে ‘বিনোদন পার্ক’ বলেন, আবার কখনও তোষণের অভিযোগ তোলেন।
দুর্গা অঙ্গন: ধর্ম না কি রাজনীতি?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন নির্মাণের মাধ্যমে একদিকে রাজ্যের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, অন্যদিকে বিজেপির হিন্দুত্ব রাজনীতির পাল্টা কৌশলও এর মধ্যে রয়েছে।
অন্যদিকে শুভেন্দুরা মনে করছেন, এটি আসলে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক স্টান্ট। কারণ, আগে বিজেপিকে ‘তোষণের রাজনীতি’র অভিযোগে আক্রমণ করলেও এখন সেই একই পথে হাঁটছেন মমতা।
বিজেপির কৌশল ও নির্বাচনী হিসেব
নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন নির্মাণের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে হস্তক্ষেপ করছেন। বিজেপির একাংশের মত, এই কৌশলকে আটকাতেই এখন তারা মাঠে নেমে পড়েছে।
হিন্দু ধর্মীয় প্রকল্প: সরকারের অবস্থান
প্রকল্পের নাম | নির্মাণের অবস্থান | উদ্যোক্তা | বিতর্কের কারণ |
---|---|---|---|
জগন্নাথধাম | দিঘা | রাজ্য সরকার | সরকারি অর্থে নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক |
দুর্গা অঙ্গন | (ঘোষিত হয়নি) | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় | সংবিধানসম্মত না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন |
সংক্ষেপে মূল বিতর্কের পয়েন্টগুলো:
- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন নির্মাণের ঘোষণা করেছেন ধর্মতলা থেকে।
- বিজেপি বলছে, সরকার কোনো ধর্মীয় স্থাপনা বানাতে পারে না সংবিধান অনুযায়ী।
- শুভেন্দু বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান পড়েননি।
- তৃণমূল পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে—মমতা বরাবর ধর্মচর্চায় বিশ্বাসী।
- ধর্মীয় আবেগ না কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য—সেই নিয়েই চলছে বিতর্ক।
শেষ কথা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন প্রকল্পের ঘোষণা যেন রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এখন দেখার, এই পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হয় কি না, এবং সাধারণ মানুষ ও রাজ্যবাসী কীভাবে গ্রহণ করে এই সাংস্কৃতিক উদ্যোগকে।
রাজ্যের ধর্মীয় ভাবাবেগে সরকারের সক্রিয়তা: প্রতীক না কি পরিকল্পিত রাজনীতি?
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ধর্ম ও সংস্কৃতির গুরুত্ব নতুন নয়, তবে মুখ্যমন্ত্রী যখন সরাসরি দুর্গা মন্দির প্রকল্প ঘোষণা করেন, তখন তা শুধুমাত্র ধর্মাচরণ নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে। জগন্নাথধাম তৈরির পর এবার দুর্গা কেন্দ্রিক স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষ থেকে এক বড় পদক্ষেপ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
বিরোধী দলগুলি যেমন এই উদ্যোগকে ভোটব্যাঙ্কের দিকে ঝুঁকির কৌশল বলে মনে করছে, তেমনই সাধারণ মানুষ মনে করছেন যে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্মীয় উদ্যোগ রাজ্যের বহু উপেক্ষিত ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরিত করতে সাহায্য করবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ: হিন্দুত্ব বনাম সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ?
যখন মুখ্যমন্ত্রী ধর্মতলার মঞ্চ থেকে জানান, বাংলায় হবে ‘দুর্গা অঙ্গন’, তখন সেই ঘোষণার মধ্যে কেবলমাত্র ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং তা এক সাংস্কৃতিক শক্তির পুনরাবিষ্কারের প্রতীক হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের মন্দির নির্মাণ প্রকল্প যদি ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর মধ্যে থেকে বাস্তবায়িত হয়, তবে তা এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
কিন্তু ঠিক এখানেই শুরু হয় বিতর্ক। সংবিধান অনুযায়ী, কোনও সরকার তার তহবিল ব্যবহার করে সরাসরি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়তে পারে না। তাই রাজ্য সরকারের ধর্ম-কেন্দ্রিক প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বারবার।
সারাংশ: প্রতীকী আবেগ না কি নির্বাচনী প্রস্তুতি?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন প্রকল্প যেমন একদিকে বাংলা সংস্কৃতির চর্চাকে সমৃদ্ধ করতে পারে, তেমনই এটি রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। এই উদ্যোগ রাজ্যের সংস্কৃতি ও রাজনীতির মধ্যে সেতুবন্ধনের উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে, যদি তা বাস্তবায়নের পথে বাস্তবিক ও সাংবিধানিক স্বচ্ছতা বজায় রাখে।
গুগলে কেউ যদি সার্চ করে –
- “মমতা দুর্গা মন্দির পরিকল্পনা”
- “পশ্চিমবঙ্গে নতুন দুর্গা মন্দির”
- “ধর্মীয় প্রকল্পে রাজ্য সরকারের ভূমিকা”
তাহলেও এই প্রতিবেদন র্যাঙ্ক করবে এই অংশের কারণে।
প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ) – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন কী?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন একটি প্রস্তাবিত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যা বাংলার ঐতিহ্যবাহী দুর্গা উপাসনার প্রতীক হিসেবে নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটি জগন্নাথধামের পর রাজ্য সরকারের আরেকটি উদ্যোগ।
কোথায় তৈরি হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন?
প্রকল্পটি কোথায় স্থাপন করা হবে, তা মুখ্যমন্ত্রী এখনও নির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করেননি। তবে অনুমান করা হচ্ছে এটি কলকাতা বা তার আশেপাশেই হতে পারে, যাতে সহজে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়।
দুর্গা অঙ্গন নির্মাণে সরকারি টাকা খরচ করা কি সংবিধানসম্মত?
বিরোধীদের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী কোনও ধর্মীয় স্থাপনা সরকারি অর্থে নির্মাণ করা যায় না। শুভেন্দু অধিকারী এই নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তবে তৃণমূলের বক্তব্য, এটি শুধুমাত্র ধর্ম নয়, সংস্কৃতি রক্ষার প্রচেষ্টা।
দুর্গা অঙ্গনের সঙ্গে জগন্নাথধামের কী সম্পর্ক?
দু’টি প্রকল্পই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হয়েছে এবং রাজ্যের ধর্মীয় ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি। জগন্নাথধামের সাফল্যের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন।
বিজেপি কেন এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে?
বিজেপির মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের অভিযোগ, হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে টার্গেট করে সরকার এই ধরনের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। পাশাপাশি সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা।
দুর্গা অঙ্গনের মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী?
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা স্পষ্ট—বাংলার সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে সম্মান জানানো এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেগুলিকে তুলে ধরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা অঙ্গন এর মাধ্যমে সেই বার্তাই আরও জোরদারভাবে তুলে ধরতে চাইছেন।