নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in : পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ সতর্কতা প্রতিদিন নতুন করে আতঙ্কের খবর শোনাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত শক্তি সঞ্চয় করে নিম্নচাপে রূপ নিচ্ছে। এর ফলে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রবিদ্যুৎ ও টানা বৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহজুড়ে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ—সব জেলাতেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
নিম্নচাপের কারণে ফের নতুন বিপদের আশঙ্কা
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত ধীরে ধীরে নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে। এর জেরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা সংলগ্ন এলাকায় ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে।
উপকূলে মৎস্যজীবীদের জন্য কড়া নিষেধাজ্ঞা
ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে সমুদ্র এখন উত্তাল। উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। তাই আগামী ২৮ অগস্ট পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছে হাওয়া অফিস।
দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ ও ঝড়বৃষ্টি
কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে মঙ্গলবার থেকেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হতে পারে। সঙ্গে থাকবে ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া।
- বুধবার ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়াতে সতর্কতা জারি হয়েছে।
- বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতা-সহ প্রায় সব দক্ষিণবঙ্গের জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি থাকবে।
- শুক্রবারও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলতে পারে বিভিন্ন জায়গায়।
উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি, কোথায় কতটা সতর্কতা
শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং উত্তর দিনাজপুরে বজ্রঝড় হতে পারে।
বুধবার ভারী বৃষ্টি (৭–১১ সেমি) হতে পারে জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ারে। যদিও বৃহস্পতিবার কোনও সতর্কতা নেই, তবে শুক্রবার থেকে রবিবার ফের দুর্যোগ দেখা দিতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ সতর্কতা অনুযায়ী জেলায় জেলায় আবহাওয়ার সম্ভাবনা (টেবিল)
দিন | দক্ষিণবঙ্গের পূর্বাভাস | উত্তরবঙ্গের পূর্বাভাস |
---|---|---|
মঙ্গলবার | কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুরে ঝড়বৃষ্টি | জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুরে বৃষ্টি |
বুধবার | বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামে বজ্রঝড় | জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টি |
বৃহস্পতিবার | কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় হলুদ সতর্কতা | সতর্কতা নেই |
শুক্রবার | মাঝারি বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে চলতে পারে | জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ফের ভারী বৃষ্টি |
তাপমাত্রার হালচাল
- কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা: ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (স্বাভাবিকের থেকে সামান্য কম)
- সর্বোচ্চ তাপমাত্রা: ৩১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১.৩ ডিগ্রি কম)
কীভাবে প্রভাব ফেলবে এই নিম্নচাপ?
এই পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ সতর্কতা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবহন, নদীপথে যাতায়াত, ফসল ও চাষাবাদ সব ক্ষেত্রেই এই আবহাওয়া অস্বস্তি তৈরি করবে। মৎস্যজীবী, চাষি এবং সাধারণ মানুষকে তাই আপাতত কয়েকদিন সতর্ক থাকতে হবে।
আবহাওয়া সতর্কবার্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের চিন্তা
সাম্প্রতিক সময়ে হাওয়া অফিসের বারবার সতর্কবার্তায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চিন্তা বাড়ছে। ঝড়বৃষ্টি ও বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকায় অনেকেই যাতায়াত বা বাইরে বেরোনোর সময় পরিকল্পনা বদলাচ্ছেন। নিম্নচাপের প্রভাব কেবলমাত্র আবহাওয়ায় নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসে কৃষকদের দুশ্চিন্তা
প্রবল বর্ষণের কারণে কৃষিজমিতে জল জমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধান ও সবজির ক্ষেতে ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। অনেক কৃষকই তাই আগেভাগে ফসল কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এই ধরনের আবহাওয়া সতর্কবার্তা গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
নিম্নচাপের প্রভাবে শহুরে জীবনে অস্বস্তি
কলকাতা ও সংলগ্ন শহরাঞ্চলে জল জমে যাওয়া, যানজট, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া—সব মিলিয়ে শহুরে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে অফিস যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে যেতে পারে। আবহাওয়া খবর অনুযায়ী, কয়েকদিন টানা বৃষ্টি শহরাঞ্চলে পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনায় পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা
নদীপথে এবং উপকূলবর্তী এলাকায় নৌকো চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হতে পারে। ট্রেন ও বাস পরিষেবাতেও বিলম্ব ঘটতে পারে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় মানুষকে আগে থেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি জরুরি
আবহাওয়া সতর্কবার্তা অনুযায়ী সম্ভাব্য ঝড়বৃষ্টির আগে রাজ্য প্রশাসন উদ্ধারকাজে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী ইতিমধ্যেই সতর্ক রয়েছে। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ সতর্কতা সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
পশ্চিমবঙ্গে নিম্নচাপ কবে থেকে প্রভাব ফেলতে শুরু করবে?
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয়ে মঙ্গলবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রভাব ফেলতে শুরু করবে।
মৎস্যজীবীদের জন্য কী ধরনের সতর্কতা জারি হয়েছে?
পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ সতর্কতা অনুযায়ী, আগামী ২৮ অগস্ট পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে না যেতে মৎস্যজীবীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কারণ উত্তাল সমুদ্রের কারণে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার হতে পারে।
কোন কোন জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে?
দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর এবং উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কালিম্পং জেলাগুলোতে নিম্নচাপের কারণে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
নিম্নচাপের সময় সাধারণ মানুষকে কীভাবে সতর্ক থাকতে হবে?
এই সময়ে অকারণে বাইরে না বেরোনোই সবচেয়ে ভালো। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে উঁচু খোলা জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত এবং বিদ্যুতের খুঁটি বা গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়।
নিম্নচাপের প্রভাবে তাপমাত্রায় কী পরিবর্তন হচ্ছে?
পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ সতর্কতার সময় বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাচ্ছে। কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকছে এবং রাতের তাপমাত্রাতেও সামান্য হেরফের দেখা যাচ্ছে।