
নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি:
দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় দাবি — বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (DA) প্রদান। সেই দাবিকে কেন্দ্র করেই সুপ্রিম কোর্টে চলছে মামলা। আদালতের নির্দেশমতো নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার দিনে, ফের একবার আদালতের শরণাপন্ন হল রাজ্য সরকার। পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হল, এখনই ২৫% বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। তার জন্য আরও ছ’মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
কবে দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বকেয়া ডিএ
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল ৬ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ২৫% মহার্ঘ ভাতা দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সেই সময়সীমার শেষ দিনে রাজ্য সরকারের সাফ জবাব — এখনই এই টাকা মেটানো সম্ভব নয়। তাই আরও ছ’মাস সময় চাওয়া হয়েছে আদালতের কাছে।
ডিএ দিতে না পারার পিছনে রাজ্যের কারণ কী
রাজ্য সরকারের দাবি, বর্তমানে আর্থিক সংকটে আছে রাজ্য। ২৫% বকেয়া ডিএ দিতে গেলে বিশাল অঙ্কের টাকা প্রয়োজন, যা এই মুহূর্তে রাজকোষে নেই। অতএব, তারা চায় সময়। একই সঙ্গে আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনও জানানো হয়েছে।
ডিএ কি বাধ্যতামূলক
রাজ্য সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, মহার্ঘ ভাতা প্রদান কোনও মৌলিক অধিকার নয়। এটি বাধ্যতামূলকও নয়। অর্থাৎ এটি একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পড়ে, যার ফলে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে তারা বাধ্য নয়।
রাজ্যের নিজস্ব ডিএ নিয়ম ROPA 2009
রাজ্যের যুক্তি অনুযায়ী, তারা ROPA 2009 নামক একটি নিজস্ব বিধি অনুসরণ করে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, কত হারে ডিএ বাড়বে তা একমাত্র রাজ্যই ঠিক করবে। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের আর্থিক কাঠামো আলাদা — তাই কেন্দ্রের ডিএ হারে রাজ্যের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
কেন্দ্রীয় সহায়তা কমে যাওয়াও একটি কারণ
রাজ্য আরও দাবি করেছে, কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে রাজ্যের ওপর আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্র এখনও ডিএ বকেয়ার সমস্ত অর্থ দেয়নি।
শুধু সরকারি কর্মীই নয়, আরও অনেককে ডিএ দেয় রাজ্য
রাজ্যের যুক্তি — তারা শুধু সরকারি কর্মচারীকেই নয়, বরং স্থানীয় প্রশাসন, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ইত্যাদির কর্মীদেরও ডিএ দেয়। এছাড়াও রয়েছে পেনশন, স্বাস্থ্য প্রকল্প, এলটিসি ইত্যাদি। এই সব কিছুতেই অর্থ লাগে, তাই কেন্দ্রের হারে ডিএ দেওয়া অসম্ভব।
বকেয়া ডিএর মোট পরিমাণ কত
সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত এই বকেয়ার হিসাব দিয়েছে নিম্নরূপ—
শ্রেণি | বকেয়া ডিএর পরিমাণ |
---|---|
সরকারি কর্মচারী | ₹১১,৮৯০.১৮ কোটি |
পেনশনভোগী | ₹১১,৬১১.৪৫ কোটি |
অন্যান্য কর্মচারী | ₹১৮,৩৬৯.৩২ কোটি |
মোট | ₹৪০,০০০ কোটি |
বর্তমানে কত শতাংশ ডিএ পান রাজ্যের কর্মীরা
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরা ১৮% হারে মহার্ঘ ভাতা পান। অথচ কেন্দ্রের কর্মীরা পাচ্ছেন ৫৫% হারে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে ৩৭ শতাংশের ফারাক রয়ে গেছে।
কবে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
২০২৫ সালের ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৬ সপ্তাহের মধ্যে ২৫% বকেয়া মহার্ঘ ভাতা রাজ্য সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ২৭ জুন, ২০২৫। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার দিনেই রাজ্য আদালতের কাছে সময় চায়, আরও ৬ মাস।
রাজ্য সরকারের দাবির সারাংশ
রাজ্য কেন ডিএ এখনই দিতে পারছে না? নিচে পাঁচটি প্রধান কারণ দেওয়া হল—
- আর্থিক সংকট রয়েছে, রাজ্য কোষাগারে এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় অর্থ নেই
- ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, এটি মৌলিক অধিকার নয়
- ROPA 2009 অনুযায়ী রাজ্যের নিজস্ব নিয়ম, কেন্দ্রের হারে ডিএ দেওয়া প্রযোজ্য নয়
- কেন্দ্রীয় অনুদান কমেছে, ফলে রাজ্যের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে
- অন্যান্য শ্রেণিকেও ডিএ দিতে হয়, তাই কেন্দ্রের হারে দেওয়া সম্ভব নয়
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
পশ্চিমবঙ্গ সরকার কবে বকেয়া ডিএ দেবে?
রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, তারা এখনই বকেয়া ২৫% মহার্ঘ ভাতা দিতে পারছে না। সেই কারণে তারা অতিরিক্ত ৬ মাস সময় চেয়েছে আদালতের কাছে।
মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) কি বাধ্যতামূলক?
রাজ্য সরকারের মতে, মহার্ঘ ভাতা বাধ্যতামূলক নয়। এটি একটি ঐচ্ছিক সুবিধা, যা কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়।
কেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনই ডিএ দিতে পারছে না?
রাজ্যের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যের আর্থিক সংকট রয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বকেয়া মেটানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয় বলেই তারা জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ ফারাক কত?
বর্তমানে রাজ্যের কর্মীরা পান ১৮% ডিএ, আর কেন্দ্রীয় কর্মীরা পান ৫৫%। ফারাক প্রায় ৩৭ শতাংশ।
ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকার কোন নিয়ম অনুসরণ করে?
রাজ্য সরকার ROPA 2009 নামে নিজস্ব একটি নিয়ম অনুসরণ করে, যেখানে ডিএ বৃদ্ধির হার রাজ্য নিজেই নির্ধারণ করে।
সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে কত সময় দিয়েছিল?
২০২৫ সালের ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ২৫% বকেয়া ডিএ দিতে হবে। সেই সময়সীমা শেষ হয় ২৭ জুন, ২০২৫।
ডিএ দিতে রাজ্যের মোট কত টাকা লাগবে?
রাজ্যের হিসেবে, মোট প্রয়োজন প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগী ও অন্যান্য কর্মীদের জন্য আলাদা আলাদা পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার কি রাজ্যকে ডিএ দিতে বাধ্য করতে পারে?
না, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে ডিএ দেওয়ার জন্য বাধ্য করতে পারে না। কারণ, ডিএ প্রদানের নিয়ম আলাদা এবং রাজ্য নিজস্ব নিয়ম মেনে চলে।
রাজ্যের আর্থিক চাপ কেন বেড়েছে?
রাজ্যের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে এবং ডিএ সংক্রান্ত কিছু বকেয়াও এখনও দেয়নি। এর ফলে রাজ্যের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে।
সব রাজ্যে কি একই হারে ডিএ দেওয়া হয়?
না, প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আর্থিক অবস্থা ও নীতি অনুযায়ী ডিএর হার আলাদা হয়। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সব রাজ্যের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।