নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in : বালি পাচার মামলায় ইডি হানা প্রতিদিন নতুন মোড় রাজ্যে বালি পাচার মামলার তদন্তে ফের বড়সড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সোমবার ভোর থেকেই কলকাতা সহ ঝাড়গ্রাম, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় ইডি-র তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। জানা গিয়েছে, এই অভিযানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও উপস্থিত ছিলেন। বালি পাচার মামলাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে।
বালি পাচার মামলায় কলকাতার একাধিক এলাকায় ইডি-র নজিরবিহীন অভিযান
ভোর রাত থেকেই কলকাতার বেহালা, রিজেন্ট কলোনি, সল্টলেক ও টালিগঞ্জের একাধিক জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী অরুণ শ্রফের বাড়িতেও অভিযান চালাচ্ছে ইডি। স্থানীয় সূত্রে খবর, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যার মধ্যে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যও থাকতে পারে বলে অনুমান।
ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘিরে রাখল এলাকা
শুধু কলকাতা নয়, ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরেও চলছে ইডি-র হানা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জহিরুল আলি নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বালি কারবারের সঙ্গে যুক্ত এবং একাধিক বালি খাদানের মালিক। একসময় ভিলেজ পুলিশে চাকরি করলেও পরে তিনি চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন। ইডি ইতিমধ্যেই তাঁর তিনতলা বাড়ি এবং গাড়ি খতিয়ে দেখেছে।
উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়াতেও একাধিক জায়গায় তল্লাশি
ইডি সূত্রে খবর, রবিবার গভীর রাতেই বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তদন্তকারীরা রাজ্যের নানা প্রান্তে পৌঁছে যান। সোমবার ভোরেই একযোগে অভিযান শুরু হয়। উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার বেশ কয়েকটি ঠিকানায় তল্লাশি চলছে।
কত জায়গায় অভিযান চলছে?
ইডি-র তরফে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও সূত্রের খবর, শুধু ঝাড়গ্রাম জেলাতেই প্রায় ৬টি আলাদা জায়গায় তল্লাশি অভিযান চলছে।
তল্লাশি হওয়া মূল জায়গাগুলি
- কলকাতার বেহালা, রিজেন্ট কলোনি, সল্টলেক ও টালিগঞ্জ
- ব্যবসায়ী অরুণ শ্রফের বাড়ি
- ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে জহিরুল আলির বাড়ি ও গাড়ি
- উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক ঠিকানা
- নদিয়ার একাধিক এলাকা
টেবিল: বালি পাচার মামলায় ইডি অভিযানের হটস্পট
জেলা/এলাকা | গুরুত্বপূর্ণ ঠিকানা বা ব্যক্তি | অবস্থা |
---|---|---|
কলকাতা | বেহালা, রিজেন্ট কলোনি, সল্টলেক, টালিগঞ্জ, অরুণ শ্রফের বাড়ি | তল্লাশি চলছে |
ঝাড়গ্রাম | গোপীবল্লভপুর, জহিরুল আলির বাড়ি ও গাড়ি | তল্লাশি চলছে |
উত্তর ২৪ পরগনা | একাধিক ঠিকানা | তল্লাশি চলছে |
নদিয়া | একাধিক ঠিকানা | তল্লাশি চলছে |
বালি পাচার মামলার তদন্তে ইডি-র এই অভিযান রাজ্য রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন তৈরি করেছে। একদিকে বড় ব্যবসায়ী, অন্যদিকে প্রাক্তন ভিলেজ পুলিশের মতো বিভিন্ন স্তরের মানুষের নাম উঠে আসায় সাধারণ মানুষের কৌতূহল আরও বেড়েছে। তদন্ত শেষ হলে গোটা চিত্র স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবৈধ বালি ব্যবসা নিয়ে তদন্তে বাড়ছে চাপ
রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ বালি ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ উঠে এসেছে। স্থানীয় মানুষদের দাবি, এই বালি ব্যবসার ফলে শুধু পরিবেশ নয়, গ্রামীণ রাস্তা ও কৃষিজমিরও ক্ষতি হচ্ছে। বালি পাচার মামলার তদন্ত শুরু হওয়ায় এবার প্রশাসনের তরফে কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত মিলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তদন্তের মাধ্যমে অবৈধ বালি কারবারে যুক্ত বড় চক্র সামনে আসতে পারে।
বেআইনি বালি খাদান ঘিরে বাড়ছে নজরদারি
ইডি-র পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনও বেআইনি বালি খাদানের উপর নজরদারি বাড়াতে শুরু করেছে। বিভিন্ন নদী তীরবর্তী এলাকায় ভোর রাতেই ট্রাকের মাধ্যমে বালি পাচার করা হয় বলে অভিযোগ। এই ধরনের পাচার আটকাতে নিয়মিত চেকিং চালানো হলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি তদন্তের আওতায়
বালি কারবারের সঙ্গে প্রায়শই বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন জড়িয়ে থাকে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই লেনদেনে প্রচুর অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি দেওয়া হয়। বালি পাচার মামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অপরাধ দমনও ইডি-র তদন্তের অন্যতম লক্ষ্য। নথি ও হিসাবপত্র খতিয়ে দেখে কারা এই চক্রে যুক্ত, তা স্পষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
পরিবেশ সুরক্ষায় বালি পাচার রোধ জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ন্ত্রণহীন বালি উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ বদলে যায় এবং ভাঙন সমস্যা বাড়ে। গ্রামীণ এলাকায় সেতু ও বাঁধ ভেঙে পড়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়। তাই বালি পাচার মামলার তদন্ত শুধুমাত্র আর্থিক অপরাধ নয়, পরিবেশ সুরক্ষার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যতে আরও অভিযান হতে পারে
সূত্রের খবর, ইডি শিগগিরই আরও কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালাতে পারে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই বালি পাচার মামলার সূত্র ধরে বড় নেটওয়ার্ক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ্যে আসবে। সাধারণ মানুষও আশা করছেন, কড়া পদক্ষেপের ফলে অবৈধ বালি ব্যবসা কিছুটা হলেও কমবে।
বালি পাচার মামলা নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
বালি পাচার মামলা কী?
বালি পাচার মামলা হল অবৈধভাবে নদী বা অন্যান্য স্থান থেকে বালি উত্তোলন ও তা বেআইনিভাবে বিক্রির সঙ্গে যুক্ত এক ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ। এই ধরনের কারবারে প্রায়শই পরিবেশের ক্ষতি হয় এবং রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়।
কেন ইডি বালি পাচার মামলায় হানা দেয়?
ইডি আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করে। বালি পাচার মামলার সঙ্গে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন যুক্ত থাকায় ইডি এইসব জায়গায় হানা দেয়, যাতে নথি সংগ্রহ করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
কোন কোন জায়গায় বালি পাচার মামলার তদন্ত হয়েছে?
কলকাতার বেহালা, রিজেন্ট কলোনি, সল্টলেক ও টালিগঞ্জ ছাড়াও ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি হয়েছে।
কারা সাধারণত বালি পাচার মামলায় জড়িয়ে পড়ে?
বালি খাদানের মালিক, ব্যবসায়ী এবং কখনও কখনও প্রভাবশালী স্থানীয় ব্যক্তিরা এ ধরনের মামলায় নাম জড়াতে দেখা যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, কেউ কেউ সরকারি চাকরি ছেড়ে সরাসরি বালি ব্যবসায় নামেন।
বালি পাচার মামলার তদন্তে সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী?
স্থানীয় মানুষজন অনেক সময় বালি পাচার নিয়ে অভিযোগ জানান। তাদের দেওয়া তথ্য তদন্তে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি, মানুষ সচেতন থাকলে এবং অবৈধ বালি কারবারের বিরোধিতা করলে এই ধরনের অপরাধ রোধ করা সহজ হয়।