নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in : নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলা– এই ঘটনার জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। আরজি কর-কাণ্ডের এক বছর পূর্তির দিন আয়োজিত এই কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত উত্তপ্ত রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি এবং কনস্টেবলকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ এখন রাজ্যজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। পুলিশি তদন্তে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছেন অভিযুক্তরা, একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার জগদ্দলের যুবক
রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলের বাসিন্দা চন্দন গুপ্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলার মামলায়। মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থল থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৪০ বছর বয়সি এই যুবক ৯ অগস্টের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাঁকে শনাক্ত করা হয়।
পুলিশি অভিযোগ ও মামলা
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত চন্দনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৯(১), ১২১(২) এবং ৩(৫) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—
- খুনের চেষ্টা
- সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া
- ইচ্ছাকৃত আঘাত করা
এই মামলাগুলি প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
ঘটনার পটভূমি: কীভাবে শুরু হল অশান্তি
আরজি কর-কাণ্ডের এক বছর পূর্তিতে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের ডাকে আয়োজিত হয় নবান্ন অভিযান। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানান, এবং বহু বিজেপি কর্মী মিছিলে যোগ দেন।
পুলিশি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ধর্মতলা থেকে মিছিল নবান্নের উদ্দেশে রওনা হয়। পার্ক স্ট্রিট মোড়ে পুলিশ মিছিল আটকালে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
- পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি শুরু হয়
- এক কনস্টেবলকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ ওঠে
- নির্যাতিতার মাকেও মারধরের অভিযোগ আসে, যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে
পুলিশের দাবি ও সাংবাদিক বৈঠকের তথ্য
কলকাতার জয়েন্ট সিপি (সদর) মীরাজ খালিদ জানান—
- নির্যাতিতার মাকে মারধরের প্রমাণ মেলেনি
- বরং বিক্ষোভকারীরাই পুলিশকে গালিগালাজ ও মারধর করেছেন
- সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশকে মারধরের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়
এখন পর্যন্ত নেওয়া আইনি পদক্ষেপ
পুলিশি সূত্রে খবর—
- নবান্ন অভিযানের ঘটনায় মোট ৬টি মামলা রুজু হয়েছে
- ভিডিও দেখে একাধিক অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে
- ৩টি মামলায় মোট ৬ জনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে
মামলার ধরণ | অভিযুক্তের নাম | থানা |
---|---|---|
নিউ মার্কেট থানার অভিযোগ | সজল ঘোষ, তমোঘ্ন ঘোষ, অশোক দিন্দা | নিউ মার্কেট |
হেয়ার স্ট্রিট থানার অভিযোগ | ভোলা সরকার, কুশল পান্ডে, কমলজিৎ সিংহ | হেয়ার স্ট্রিট |
ঘটনার পর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা ঘিরে রাজ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। একপক্ষ বলছে, পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে, অন্যপক্ষ বলছে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় বিক্ষোভকারীদের।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর আক্রমণ যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গুরুতর অপরাধ— এই বার্তাই দিয়েছে প্রশাসন।
রাজনৈতিক বিক্ষোভে পুলিশি সংঘর্ষের প্রভাব
রাজনৈতিক বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়, তবে নবান্ন অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি এবং রাস্তার মাঝে পুলিশকে মারধরের অভিযোগ রাজ্যে বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর আক্রমণ গণতান্ত্রিক পরিসরে একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয় যাতে ভবিষ্যতে এমন সহিংসতা এড়ানো যায়।
পুলিশের উপর আক্রমণের আইনি দৃষ্টিকোণ
পুলিশের উপর আক্রমণ বা সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়ার অপরাধ ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এই ধরনের মামলায় দোষ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে কারাদণ্ড বা জরিমানার মতো শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর আক্রমণ সম্পর্কিত মামলায় ইতিমধ্যেই একাধিক ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে, যা শাস্তির মাত্রা আরও বাড়াতে পারে।
ভিডিও প্রমাণ ও তদন্তের অগ্রগতি
আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নবান্ন অভিযানের ঘটনায়ও একাধিক ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং সেগুলি থেকে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অংশ নেওয়া আরও কয়েকজনকে শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হতে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও জনমত
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ কেউ মনে করছেন, রাজনৈতিক আন্দোলনে অহিংস পদ্ধতি বজায় রাখা উচিত, আবার অন্যরা দাবি করছেন, প্রশাসন আন্দোলন দমন করতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই একমত যে, পুলিশি আক্রমণ বা সরকারি কর্মীর উপর হামলা গণতান্ত্রিক পরিবেশে অগ্রহণযোগ্য।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলা নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলা কবে ঘটেছিল?
এই ঘটনা ঘটেছিল ৯ অগস্টে, আরজি কর-কাণ্ডের এক বছর পূর্তির দিনে আয়োজিত নবান্ন অভিযানের সময়। সেই দিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি এবং হাতাহাতির মধ্যে এক কনস্টেবলকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ ওঠে।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলায় কাকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলের বাসিন্দা চন্দন গুপ্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ঘটনার দিনে সরাসরি এই হামলায় জড়িত ছিলেন এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলার জন্য কী কী মামলা হয়েছে?
পুলিশ চন্দন গুপ্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে খুনের চেষ্টা, সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া এবং ইচ্ছাকৃত আঘাত করা। এছাড়া মোট ছয়টি মামলা রুজু হয়েছে এবং কয়েকজনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছে?
ঘটনার পর রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। একপক্ষ পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ করেছে, অন্যপক্ষ বলেছে বিক্ষোভকারীরাই আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে এবং পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের উপর হামলার তদন্ত কীভাবে চলছে?
পুলিশ ভিডিও ফুটেজ এবং প্রমাণ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করছে। ইতিমধ্যেই একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নোটিস জারি হয়েছে এবং আরও গ্রেফতারের সম্ভাবনা রয়েছে।