নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in : মহালয়া কবে ? কত তারিখ মহালয়া পড়ছে বাঙালির কাছে মহালয়া শুধুই একটি দিন নয়, এটি আবেগ, এটি সংস্কৃতি, এটি এক বিশেষ অনুভূতির নাম। ভোরবেলায় যখন আকাশ ভরে ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের সুরে, তখনই মনে হয় দেবী দুর্গা আসছেন। প্রতি বছরই মহালয়া ঘিরে মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠে— মহালয়া কবে? কত তারিখ মহালয়া পড়ছে? কারণ এই দিন থেকেই শুরু হয় দেবীপক্ষের আগমনী সুর এবং শেষ হয় পিতৃপক্ষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।
মহালয়া কবে? কত তারিখ মহালয়া পড়ছে ২০২৫ সালে
শাস্ত্র মতে মহালয়া হল অমাবস্যা তিথির বিশেষ মুহূর্ত। এদিনই দেবী দুর্গা মর্ত্যে আগমন শুরু করেন বলে বিশ্বাস। পঞ্জিকা অনুসারে—
- মহালয়া পড়ছে ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার (৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ)।
- অমাবস্যা তিথি শুরু : ২০ সেপ্টেম্বর, শনিবার রাত ১২টা ১৮ মিনিট (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে)
- অমাবস্যা তিথি শেষ : ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার রাত ১টা ২৪ মিনিট
অন্যদিকে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী অমাবস্যা শুরু হচ্ছে ২০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে এবং শেষ হচ্ছে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ২৩ মিনিটে।
অর্থাৎ, যেকোনো মতে মহালয়া ২০২৫ পড়ছে শনিবার থেকে রবিবার রাতের মধ্যবর্তী সময়ে।
পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ও মহালয়ার মাহাত্ম্য
মহালয়া মানেই পিতৃপক্ষের অবসান। শাস্ত্রমতে পিতৃপক্ষের সময়কালে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ, শ্রাদ্ধ ও জলদান করা হয়। যাঁরা সারা বছরে নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করতে পারেন না, তাঁদের জন্য এই অমাবস্যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
- বিশ্বাস করা হয়, মহালয়ার দিনে তর্পণ করলে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদে সংসার থেকে বাধা-বিঘ্ন দূর হয়।
- সংসারে শান্তি আসে, সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
দেবীপক্ষের সূচনা – দুর্গাপুজোর আগমনী সুর
অমাবস্যা শেষ হতেই প্রতিপদের সূচনা হয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় দেবীপক্ষ। শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গা মহালয়ার দিনেই মহিষাসুর বধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁর মর্ত্যে আগমন নিশ্চিত হয়। এই কারণে মহালয়া বাঙালির কাছে দুর্গোৎসবের সূচনাদিন।
মহালয়া ২০২৫ – সময়সূচি টেবিল
পঞ্জিকা | তিথি শুরু | তিথি শেষ | তারিখ ও দিন |
---|---|---|---|
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত | ২০ সেপ্টেম্বর, রাত ১২টা ১৮ মিনিট | ২১ সেপ্টেম্বর, রাত ১টা ২৪ মিনিট | ৩–৪ আশ্বিন (শনি–রবি) |
গুপ্তপ্রেস | ২০ সেপ্টেম্বর, রাত ১১টা ৫৩ মিনিট | ২১ সেপ্টেম্বর, রাত ১২টা ২৩ মিনিট | ৩–৪ আশ্বিন (শনি–রবি) |
মহালয়ার বিশেষ আচার ও পালন
তর্পণ
গঙ্গা বা পবিত্র জলে দাঁড়িয়ে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জলদান করা হয়। এটিই মহালয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রীতি।
ব্রতোপবাস
অনেকেই মহালয়ার দিনে ব্রত পালন করে থাকেন।
শ্রাদ্ধানুষ্ঠান
যাঁরা নির্দিষ্ট মৃত্যু তিথিতে শ্রাদ্ধ করতে পারেন না, তাঁরা মহালয়ার অমাবস্যাতেই শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করেন।
মহিষাসুরমর্দ্দিনী ও চণ্ডীপাঠ
বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই রেডিয়োতে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’। ভোররাত থেকে এই সুর যেন দুর্গাপুজোর আগমনী বার্তা পৌঁছে দেয় প্রতিটি ঘরে।
মহালয়া কেন এত আবেগঘন?
- মহালয়া হল দেবীর আগমনের বার্তা।
- এই দিন থেকেই শুরু হয় দুর্গোৎসবের কাউন্টডাউন।
- শৈশবের স্মৃতি, রেডিয়োতে মহিষাসুরমর্দ্দিনী শোনা, ভোরবেলার ঘুম ভাঙা—সব মিলিয়ে মহালয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
- প্রতি বছর মানুষ খুঁজে বেড়ায়— মহালয়া কবে? কত তারিখ মহালয়া পড়ছে।
মহালয়া পালনের জন্য দরকারি বিষয়গুলির তালিকা
- গঙ্গা বা নিকটস্থ নদীতে তর্পণ করা।
- পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ ও অর্ঘ্য নিবেদন।
- মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠ বা মহিষাসুরমর্দ্দিনী শ্রবণ।
- ব্রতোপবাস পালন।
- দেবীর আরাধনায় মনোনিবেশ।
মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাংস্কৃতিক দিক
মহালয়া শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
- ১৯৩১ সাল থেকে আকাশবাণী কলকাতায় মহিষাসুরমর্দ্দিনী সম্প্রচারিত হচ্ছে।
- বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠে এই চণ্ডীপাঠ বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয়।
- বহু পরিবারে এখনও রেডিয়ো চালিয়ে ভোরে মহালয়ার সুর শোনার অভ্যাস অটুট।
২০২৫ সালে মহালয়া কবে? কত তারিখ মহালয়া পড়ছে—এর উত্তর পরিষ্কার। ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার, ৪ আশ্বিন এই দিনটিই বাঙালির মহালয়া। এই দিনে শেষ হবে পিতৃপক্ষ এবং শুরু হবে দেবীপক্ষ। আর সেখান থেকেই শুরু হবে দুর্গোৎসবের আগমনী।
তাই মনে রাখুন তারিখ—২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মহালয়া। এই দিন থেকেই শুরু হবে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবের কাউন্টডাউন।
মহালয়ার তারিখ নিয়ে প্রতি বছরই ভক্তদের মধ্যে কৌতূহল থাকে। কারণ এই দিন থেকেই দেবীপক্ষের সূচনা হয়, যা দুর্গাপুজোর আধ্যাত্মিক আবহকে আরও গাঢ় করে তোলে। অনেকেই গুগলে খোঁজেন—মহালয়া কবে পড়ছে, কত তারিখে মহালয়া, বা মহালয়া ২০২৫ সালের দিন কোনটা।
আসলে, পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবীপক্ষের সূচনার মিলন মুহূর্তই হল মহালয়া। এই বিশেষ দিনে শ্রদ্ধার সাথে পূর্বপুরুষদের তর্পণ সম্পন্ন করার পাশাপাশি মানুষ ভোরবেলা রেডিওতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শুনে শুভ সূচনা করে। তাই মহালয়ার দিনটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, সাংস্কৃতিক আবহের দিক থেকেও বাঙালির জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
মহালয়া দিনটি জানলে মানুষ আগে থেকেই দুর্গাপুজোর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে, আর তাই মহালয়ার তারিখ সার্চ করে জানা আজকাল আরও বেশি দরকারি হয়ে উঠেছে।
মহালয়া নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQ)
মহালয়া কবে ২০২৫ সালে পড়ছে?
২০২৫ সালে মহালয়া পড়ছে ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এই দিনটি ৪ আশ্বিন।
কত তারিখ মহালয়া পড়ছে ইংরেজি ক্যালেন্ডারে?
ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মহালয়া ২০২৫ পড়ছে ২০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত চলবে। মূলত ২১ সেপ্টেম্বর রবিবারই মহালয়া পালিত হবে।
মহালয়া কেন পালন করা হয়?
মহালয়া পালন করা হয় পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ও দেবীপক্ষের সূচনার জন্য। এদিন তর্পণ ও শ্রাদ্ধের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয় এবং বিশ্বাস করা হয় দেবী দুর্গা এই দিনে মর্ত্যে আগমন শুরু করেন।
মহালয়া দিনে কী কী রীতি পালন করা হয়?
এই দিনে প্রধানত গঙ্গায় বা পবিত্র জলে তর্পণ করা হয়, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয় এবং অনেকেই ব্রতোপবাস পালন করেন। ভোরবেলায় রেডিয়োতে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ শোনা মহালয়ার অন্যতম সাংস্কৃতিক রীতি।
মহালয়া কি দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত?
হ্যাঁ, মহালয়া থেকেই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার দিন হিসেবেই মহালয়া পরিচিত। তাই প্রতি বছর মানুষ খোঁজ করে— মহালয়া কবে, কত তারিখ মহালয়া পড়ছে।
মহালয়া ও অমাবস্যার মধ্যে কী সম্পর্ক আছে?
মহালয়া মূলত অমাবস্যা তিথিতেই পড়ে। এই তিথি পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবীপক্ষের শুরু, তাই মহালয়া অমাবস্যা তিথির সঙ্গেই সম্পর্কিত।
মহালয়া শুনলে কেন ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ মনে পড়ে?
কারণ আকাশবাণী কলকাতায় ১৯৩১ সাল থেকে মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ সম্প্রচারিত হচ্ছে। এটি বাঙালির সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।