নিজস্ব প্রতিবেদন, Bengal Job Study.in : ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি প্রতিদিন বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যেই সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে ভারত ও আমেরিকার বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব। রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না-করায় ভারতের উপর শুল্ক-জরিমানা চাপিয়েছে আমেরিকা। এবার আবার নতুন দাবি উঠেছে মার্কিন ভুট্টা কেনার প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে। এর ফলে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক আরও টানাপোড়েনের মুখে পড়েছে।
আমেরিকার ভুট্টা কেনার চাপ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন বিদেশসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—ভারত যদি মার্কিন ভুট্টা না কেনে, তবে তাদের আমেরিকার বাজারে ব্যবসার সুযোগ কমে যেতে পারে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যে শুল্ক কমানো না হলে আরও বড় ধাক্কার মুখে পড়তে হবে নয়াদিল্লিকে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ
- ভারত আমেরিকায় কম শুল্ক দিয়ে পণ্য বিক্রি করে।
- বিপরীতে, মার্কিন পণ্যে আমদানি শুল্ক অনেক বেশি নেয় ভারত।
- রাশিয়া থেকে তেল কিনে সেই টাকা ইউক্রেন যুদ্ধের খাতে কাজে লাগানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময় থেকেই বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখনও কোনো পক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। এর মধ্যেই ট্রাম্প দু’দফায় ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন।
কেন বাণিজ্যচুক্তি জরুরি?
- দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা।
- ভারতীয় রপ্তানি বাজারকে সুরক্ষা দেওয়া।
- কৃষি ও প্রযুক্তি খাতে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি।
- কূটনৈতিক টানাপোড়েন কমানো।
আমেরিকার দাবি: “১৪০ কোটি মানুষ কেন ভুট্টা কিনবে না?”
লুটনিকের মতে, ভারত তাদের জনসংখ্যার শক্তিকে ব্যবহার করছে কিন্তু আমেরিকাকে অর্থনীতির বাইরে রাখছে। তাঁর বক্তব্য, ১৪০ কোটি মানুষ যদি প্রতিদিন একটি বুশেল মার্কিন ভুট্টা কিনত, তবে সম্পর্ক আরও ভারসাম্যপূর্ণ হতো।
ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে টানাপোড়েনের প্রভাব
এই চাপানউতোর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ভারতের বাজারে আমেরিকার ভুট্টা প্রবেশ করলে স্থানীয় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার ভারতীয় পণ্যে শুল্ক বাড়লে রপ্তানিকারক সংস্থাগুলোর ওপর চাপ বাড়বে।
টেবিলে এক নজরে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য দ্বন্দ্ব
বিষয় | ভারতের অবস্থান | আমেরিকার দাবি |
---|---|---|
রাশিয়া থেকে তেল কেনা | চালু রাখবে | বন্ধ করতে হবে |
মার্কিন পণ্যে শুল্ক | উচ্চ হারে আরোপ | শুল্ক কমাতে হবে |
ভারতীয় পণ্যে শুল্ক | কম চায় ভারত | ইতিমধ্যেই ৫০% শুল্ক বসিয়েছে |
বাণিজ্যচুক্তি | আলোচনা চলছে | চাপে রাখছে ভারতকে |
মার্কিন ভুট্টা কেনা | এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি | কিনতেই হবে |
সামনে কী হতে পারে?
ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে আলোচনায় রাজি। এমনকি তিনি মোদীর সঙ্গেও কথা বলতে চান। এদিকে, মার্কিন প্রতিনিধিদলও ভারতে পৌঁছেছে আলোচনার জন্য। ফলে আগামী দিনগুলোতে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত হতে পারে।
FAQ : ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি আসলে কী?
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি হলো দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা, যার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন নিয়ম তৈরি করা হবে। এর উদ্দেশ্য হলো উভয় দেশের বাজারকে আরও উন্মুক্ত করা।
কেন ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে টানাপোড়েন চলছে?
টানাপোড়েনের মূল কারণ হলো শুল্কনীতি এবং আমেরিকার চাপ। মার্কিন প্রশাসন ভারতকে ভুট্টা কেনার পাশাপাশি আমেরিকান পণ্যে কম শুল্ক আরোপ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারত নিজের বাজার ও কৃষিকে সুরক্ষা দিতে চাইছে।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি হলে ভারতের কী লাভ হতে পারে?
চুক্তি হলে ভারতের রপ্তানি খাতে বড় সুযোগ তৈরি হবে। প্রযুক্তি, কৃষি এবং শিল্প খাতে নতুন বিনিয়োগ আসতে পারে। পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি স্থানীয় কৃষকদের উপর প্রভাব ফেলবে কি?
হ্যাঁ, মার্কিন ভুট্টা বা অন্যান্য কৃষিপণ্য যদি ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করে তবে স্থানীয় কৃষকদের জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে ভারত এই চুক্তি করার আগে শর্তগুলো নিয়ে সতর্কভাবে আলোচনা করছে।
সামনে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির ভবিষ্যৎ কী?
বর্তমানে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এই বাণিজ্যচুক্তি। ট্রাম্প ও মোদীর বক্তব্য অনুযায়ী, উভয় দেশ আলোচনায় আগ্রহী। তাই আশা করা যায় শিগগিরই একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।