ট্রাম্পের হুমকিকে উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তা তেল আমদানি চালু রাখার সিদ্ধান্ত কতটা লাভজনক?

ভারত-রাশিয়া সস্তা তেল চুক্তি শুধু জ্বালানি নয়, কৌশলগত সম্পর্কেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্ব চাপের মধ্যেও ভারত এই সস্তা আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে।

Ujjwal Dey

By Ujjwal Dey

Updated on: August 4, 2025

রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তা তেল আমদানি ভারত-রাশিয়া সস্তা তেল চুক্তি বিষয়ক প্রেস কনফারেন্স, যেখানে আন্তর্জাতিক তেল নীতি, রুবল-রুপি লেনদেন এবং কৌশলগত বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চলছে
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে অপরিশোধিত তেল আমদানি সংক্রান্ত কৌশলগত আলোচনা—নয়া দিল্লির সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারি মুখপাত্রের বক্তব্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তা তেল আমদানি প্রতিদিন বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের ওঠানামা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশগুলি যখন আমদানি নীতি পাল্টাতে ব্যস্ত, তখন ভারত একেবারে ভিন্ন পথে হাঁটছে। মার্কিন হুমকি, নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক-চাপ— কিছুই নয়াদিল্লিকে থামাতে পারেনি। বরং ‘তরল সোনা’ নামক সস্তা রুশ তেলই এখন ভারতের অর্থনৈতিক কৌশলের মূল হাতিয়ার।

নানান আন্তর্জাতিক চাপের মাঝেও কেন ভারত এখনও রাশিয়ার দিকেই আস্থা রাখছে? সত্যিই কি ট্রাম্পের হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে লাভের রাস্তা খুঁজে পেয়েছে নয়াদিল্লি? চলুন, খতিয়ে দেখা যাক।

রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা ভারতের অর্থনৈতিক বুদ্ধিমত্তা?

২০২২ সালের ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতেই রাশিয়া তাদের অপরিশোধিত তেল ‘উরাল্স’-এর দাম নামিয়ে আনে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৫ ডলারে তেল কিনে বাজারে জ্বালানি খরচ অনেকটা কমিয়ে আনে।
তুলনায়, অন্যান্য দেশ থেকে আনা তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৭০-৭৩ ডলারের মতো। তাই ট্রাম্পের শুল্কের হুমকির মধ্যেও এই চুক্তি ধরে রাখা মোদী সরকারের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ভারতের তেল আমদানির চিত্র: রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কতটা গভীর?

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত

দেশপ্রতিদিনের সরবরাহ (হাজার ব্যারেল)শতাংশে অংশ
রাশিয়া২,২৬২৪০%
ইরাক৯১৭২৪.৭%
সৌদি আরব৫২৫১২.৬%
UAE৫১৯১০%
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৪৩৯৫.৮%

রাশিয়ার সঙ্গে আমদানি চুক্তির কারণে ভারতীয় রিফাইনারিগুলির উপর খরচ কমছে এবং দেশীয় বাজারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকছে।

মার্কিন হুমকি: ট্রাম্প বনাম নয়াদিল্লি

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

  1. রাশিয়া থেকে ‘তরল সোনা’ কিনলে ভারতীয় পণ্যে ১০০% পর্যন্ত শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
  2. ৭ অগস্ট থেকে ২৫% শুল্ক কার্যকর করার কথা রয়েছে।
  3. রাশিয়া থেকে তেল কেনায় জরিমানা করার কথাও বলেছেন তিনি।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

  1. বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, “রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সময় পরীক্ষিত অংশীদারি রয়েছে।”
  2. সরকার এখনও পর্যন্ত রুশ তেল আমদানিতে কোনও বাধা দেয়নি।

রাশিয়ার তেলের দাম কমে গেলে ভারতের ভবিষ্যৎ লাভ

রাশিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা আরও কম দামে তেল দিতে পারে, যেমন ব্যারেলপ্রতি মাত্র ৩৫ ডলার— এমন সম্ভাবনাও আছে। এর ফলে:

  1. ভারতের আমদানি খরচ কমবে
  2. জ্বালানি খাতে সাশ্রয় বাড়বে
  3. দেশীয় মুদ্রার উপর চাপ কমবে

রাশিয়ার সঙ্গে টাকার বাণিজ্য: আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের কৌশল

ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ডলারে নয়, বরং টাকা এবং রুবলে লেনদেন করছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতীয় মুদ্রার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ মুদ্রা সংকট মোকাবিলার পথ সুগম হচ্ছে।

তেলের চাহিদা মেটাতে পরিকল্পিত কৌশলগত মজুত

বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার ৯০ দিনের কৌশলগত তৈলভান্ডার গড়ে তুলতে চায়, যার জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণে ‘তরল সোনা’। এর জন্য রাশিয়ার সহযোগিতা অপরিহার্য।

রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে ভারত কি প্রস্তুত?

বিকল্প উৎস অনুসন্ধান

দেশসম্ভাব্য রিফাইনারি চুক্তি
নাইজেরিয়া১১৯ হাজার ব্যারেল
কুয়েত৮৫ হাজার ব্যারেল
কলম্বিয়া১৩১ হাজার ব্যারেল

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে এই দেশগুলি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।

নিষেধাজ্ঞা আর চাহিদা: ভারতের রপ্তানি কৌশল ক্ষতিগ্রস্ত?

  1. আগে সস্তায় রুশ তেল কিনে ইউরোপে পেট্রোপণ্য রপ্তানি করত ভারত।
  2. বর্তমানে ইইউ নিষেধাজ্ঞায় সেই রপ্তানি কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
  3. বিশেষ করে নায়ারা এনার্জি সংস্থার উপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে।

রাশিয়ার থেকে আমদানি বন্ধ হলে কতটা ক্ষতি ভারতের?

বিশ্লেষকদের মতে:

  1. বছরে ৭৮,০০০ থেকে ৯৫,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে।
  2. ঘরোয়া বাজারে পেট্রল-ডিজেলের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে।
  3. মধ্যবিত্তের উপর প্রভাব পড়তে পারে সবচেয়ে বেশি।

উপসংহার: ‘তরল সোনা’ ছাড়া বিকল্প আছে কি?

রাশিয়ার থেকে সস্তায় তেল কেনা এখন ভারতের জন্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত প্রয়োজনও বটে। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক চাপ—সব সামলে ভারতের পক্ষে এই মুহূর্তে রুশ তেল আমদানি বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। বরং বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে এখনই বড়সড় পরিবর্তন আনলে সেটা দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

এই প্রতিবেদন থেকে কী জানা গেল? (সংক্ষিপ্ত তালিকা)

  1. ফোকাস কিওয়ার্ড: রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তা তেল আমদানি
  2. ভারতের তেলের ৪০% এখন রাশিয়া থেকেই
  3. আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার হুমকি কার্যকর হলে ভারতীয় অর্থনীতি চাপে পড়বে
  4. রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করলে ৯৫ হাজার কোটি টাকা খরচ বাড়তে পারে
  5. রুবল-টাকা বাণিজ্যের ফলে ভারতীয় মুদ্রার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বেড়েছে
  6. ৯০ দিনের তৈলভান্ডার গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে

ভারতের সস্তা অয়েল ডিল নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে জল্পনা বাড়ছে

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সস্তা অয়েল ডিল নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে একপ্রকার আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জালে আটকে থাকলেও মস্কো ভারতকে অপরিশোধিত তেল জোগান দিয়ে একাধিকবার মার্কিন প্রশাসনের রোষে পড়েছে। তবুও নয়াদিল্লি একটুও পিছু হটেনি। বরং এই সস্তা জ্বালানি আমদানি করে ভারত তার অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখছে। এই পদক্ষেপ শুধু সাধারণ মানুষের উপকারে আসছে না, বরং জ্বালানি নির্ভর শিল্পক্ষেত্রেও স্থিতিশীলতা আনছে।

আন্তর্জাতিক তেল বাজারে ভারতের অবস্থান কতটা শক্তিশালী হচ্ছে?

বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম যখন উঠানামা করছে, তখন রাশিয়ার তেল সরবরাহ ভারতকে এক ব্যতিক্রমী সুবিধা দিচ্ছে। সস্তা মূল্যে তেল পেয়ে ভারত রিজার্ভ তৈরি করতে পারছে, যা ভবিষ্যতের জ্বালানি সংকটে বড় ভূমিকা নেবে। এই কৌশলগত সঞ্চয় ভবিষ্যতে ভারতের তেলনীতি এবং জ্বালানি নির্ভরতা কমানোর দিকেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

রুবল-রুপি চুক্তির প্রভাব এবং টাকার বৈদেশিক মূল্য

ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যে রুবল-রুপি ব্যবস্থার মাধ্যমে ডলারের উপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কেবল আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে ভারতের অবস্থানকে স্থিতিশীল করেছে না, বরং আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতেও সহায়তা করেছে। এর ফলে দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ভারত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল চুক্তি: ভবিষ্যতের পথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব?

বর্তমান সময়ে যখন অনেক দেশ রাশিয়ার উপর থেকে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে, তখন ভারত তাদের সঙ্গে তেল বাণিজ্য আরও জোরদার করছে। এটা নিছক একটি অয়েল ট্রান্স্যাকশন নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদারিত্বের পথে এগিয়ে চলা। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে এই সম্পর্ক বজায় রাখা ভারতের ভূ-কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQ)

রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তা তেল আমদানি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তা তেল আমদানি দেশের অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে জ্বালানি বাবদ খরচ কমেছে, ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং সাধারণ মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়েনি। পাশাপাশি, এই আমদানির ফলে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পেট্রোপণ্য রপ্তানির সুযোগও পেয়েছে।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার মুখেও কেন ভারত রাশিয়ার দিকেই আস্থা রাখছে?

ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা নয়, দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সম্পর্ককেও গুরুত্ব দিচ্ছে। সস্তায় এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে তেল পাওয়ার পাশাপাশি, রুবল-টাকা লেনদেনে বৈদেশিক মুদ্রার উপর নির্ভরতাও কমছে, যা দেশের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়া থেকে তেল না কিনলে ভারতের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?

রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তা তেল আমদানি বন্ধ হলে বছরে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। এতে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়বে, যা সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে এবং ঘরোয়া বাজারে মুদ্রাস্ফীতিও বেড়ে যেতে পারে।

রাশিয়ার বদলে অন্য কোন দেশ থেকে তেল আমদানি সম্ভব?

ভারত ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, নাইজেরিয়া এবং কুয়েত থেকেও তেল আমদানি করে থাকে। তবে সেগুলির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই রাশিয়ার মতো নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী উৎস এখনও পর্যন্ত দুর্লভ।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ফলে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কি প্রভাব পড়ে?

রাশিয়ার সঙ্গে টাকার বিনিময়ে লেনদেন করার কারণে ডলার নির্ভরতা কমেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়েনি, বরং রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। এই মডেল ভবিষ্যতের বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

Table of Contents

Leave a Comment

BengalJobStudy.in Bengal job study News Govt scheem