জিমে যাওয়ার সময় নেই? তবু চাই ফিট ফিগার?তাহলে এই ৫টি সহজ ব্যায়ামেই বাড়িতে বসে গড়ে তুলুন মেদহীন শক্তপোক্ত শরীর!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: বাড়িতে ব্যায়াম করে মেদ কমানো
প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট সময় দিলেই বাড়ির আরামেই ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব শরীরের বাড়তি মেদ। জিমে না গিয়ে ঘরেই কিছু সহজ ব্যায়াম করে বাড়ানো যায় পেশির জোর, গঠন করা যায় ফিট দেহ। ব্যস্ত জীবনেও শরীরচর্চার এই কার্যকর উপায় আজ রীতিমতো জনপ্রিয়। আমেরিকার ফিটনেস ট্রেনার ক্যাসি হো-ভিনও জানাচ্ছেন, নিয়ম করে কয়েকটি ব্যায়াম করলে মেদ কমবে সহজেই, পেশিও হবে শক্তিশালী।
বাড়িতে ব্যায়াম করে মেদ কমানো: সময় বাঁচিয়ে ফিটনেস বজায় রাখুন
শারীরিক সুস্থতার জন্য জিমে যাওয়ার পরিকল্পনা অনেকের থাকলেও, বাস্তবে সময়ের অভাব বা অনীহার কারণে তা আর হয়ে ওঠে না। কারও সকালে উঠতে কষ্ট হয়, কেউবা দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঠিক এই কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাড়িতে ব্যায়াম করে মেদ কমানো—একটি সহজ, সময়সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদ্ধতি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে মাত্র ২০ মিনিট ব্যায়াম করলেই ধীরে ধীরে শরীরের ফিটনেস ফিরে আসে। শরীরচর্চার জন্য আলাদা সময় বার করতে না পারলেও বাড়িতে এই সহজ ব্যায়ামগুলি মেদ ঝরাতে ও পেশি গঠন করতে দারুণভাবে সাহায্য করবে।
হিল রেইজ়: পায়ের পেশি ও ভারসাম্য বাড়াতে কার্যকর
এই ব্যায়ামে পায়ের আঙুলে শরীরের ভার রেখে গোড়ালি ধীরে ধীরে তুলতে হয়।
কীভাবে করবেন:
- সোজা হয়ে দাঁড়ান
- পায়ের পাতার মাঝে এক হাতের দূরত্ব রাখুন
- হাঁটু সোজা রেখে গোড়ালি তুলুন
- আবার ধীরে ধীরে গোড়ালি নামান
এটি অন্তত ২০ বার করুন। ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রাথমিকভাবে কিছু ধরে দাঁড়ানো যেতে পারে। এক সময় এক পায়ের গোড়ালিও ব্যবহার করা যাবে।
ওয়াল পুশ-আপস: শরীরের উপর অংশের পেশি গঠনে সহায়ক
জিমে না গিয়েই পুশ-আপ করার বিকল্প হতে পারে ওয়াল পুশ-আপস।
কীভাবে করবেন:
- দেওয়ালের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ান
- হাত সোজা করে দেওয়ালে ঠেকান
- কনুই ভাঁজ করে শরীরকে দেওয়ালের দিকে ঠেলুন
- আবার টেনে এনে আগের অবস্থায় আসুন
প্রথমদিকে ১০-১৫ বার করলেই উপকার মিলবে। এটি কাঁধ, পিঠ এবং বাহুর মেদ ঝরাতে কার্যকর।
সিট টু স্ট্যান্ড: কোর মাসল গঠনে অসাধারণ এক্সারসাইজ
এই ব্যায়ামটি করার জন্য প্রয়োজন একটি চেয়ার।
পদ্ধতি:
- চেয়ারে এমনভাবে বসুন যেন পায়ের পাতা মাটিতে পুরো ঠেকে থাকে
- কোমর থেকে সামনের দিকে হালকা ঝুঁকে দাঁড়ান
- আবার বসুন
এইভাবে ১০-১৫ বার ওঠা-বসা করলে কোমর, তলপেট ও নিতম্বের পেশিগুলি দৃঢ় হয়। নিয়মিত চর্চায় হাত ছাড়াও এই ব্যায়াম সহজে করা যাবে।
স্প্লিট স্কোয়াট: কোয়াড্রাসেপস ও কোর মাসল একসাথে গঠিত হবে
একটি পা পেছনের টুলে রেখে আরেকটি পা সামনের দিকে রেখে হালকা ভাঁজ করুন।
পদ্ধতি:
- পেছনের পা বেঞ্চে রেখে সামনে পা ভাঁজ করুন
- ধীরে ধীরে উঠুন এবং বসুন
- প্রতিটি পায়ের জন্য ১০ বার করে করুন
এটি পায়ের পেশির জোর বাড়ায় এবং পেট-নিতম্বের চর্বি কমায়।
গ্লুট ব্রিজেস: কোমরের শক্তি ও ফিটনেস উন্নত করতে পারদর্শী
কীভাবে করবেন:
- মাটিতে শুয়ে পা ভাঁজ করুন
- কোমর তুলুন যাতে পিঠ থেকে হাঁটু পর্যন্ত সরলরেখা হয়
- ১৫ বার করে সেট করুন
এই ব্যায়ামে কোমর, তলপেট ও নিতম্বের কোর মাসল সুগঠিত হয়। পাশাপাশি পেশিও শক্তিশালী হয়।
ব্যায়ামের তালিকা এক নজরে
ব্যায়ামের নাম | পেশির প্রভাবিত অংশ | প্রস্তাবিত সংখ্যা |
---|---|---|
হিল রেইজ় | পায়ের পেশি, ভারসাম্য | ২০ বার |
ওয়াল পুশ-আপস | কাঁধ, পিঠ, বাহু | ১০-১৫ বার |
সিট টু স্ট্যান্ড | কোমর, তলপেট, নিতম্ব | ১০-১৫ বার |
স্প্লিট স্কোয়াট | পা, কোর মাসল | প্রতি পায়ে ১০ বার |
গ্লুট ব্রিজেস | কোমর, কোর মাসল | ১৫ বার |
কেন এই ব্যায়ামগুলি আপনার সময় ও শরীরের পক্ষে উপকারী
- সময় বাঁচায় – জিমে না গিয়েও কাজ চলে যায়
- বাড়তি খরচ লাগে না
- শরীরের গুরুত্বপূর্ণ পেশিগুলি সক্রিয় থাকে
- ধীরে ধীরে সুগঠিত হয় শরীর
- মেদ কমে আত্মবিশ্বাস বাড়ে
এক কথায়:
বাড়িতে ব্যায়াম করে মেদ কমানো আজকের ব্যস্ত জীবনে শরীরের যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী পথ। মাত্র ২০ মিনিট ব্যায়ামেই আপনার শরীর পেতে পারে নতুন প্রাণশক্তি আর আত্মবিশ্বাস। অভ্যাসে আনুন এই ৫টি সহজ এক্সারসাইজ আর গড়ুন ফিট দেহ ও সুস্থ জীবন।
FAQ Home Workout for Fat Loss Burn Belly Fat
বাড়িতে ব্যায়াম করলে কি সত্যিই মেদ কমে?
হ্যাঁ, সঠিক নিয়মে ও ধারাবাহিকভাবে বাড়িতে ব্যায়াম করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমানো সম্ভব। প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট সময় দিলেই ফল পাওয়া যায়।
কোন ব্যায়ামগুলি বাড়িতে করলে সবচেয়ে উপকার পাওয়া যায়?
হিল রেইজ়, ওয়াল পুশ-আপস, সিট টু স্ট্যান্ড, স্প্লিট স্কোয়াট ও গ্লুট ব্রিজেস—এই পাঁচটি ব্যায়াম বাড়িতে সহজেই করা যায় এবং এগুলি খুবই কার্যকর।
এই ব্যায়ামগুলি কি সকালে করাই ভালো?
সকাল বা সন্ধ্যা—যেকোনো সময় করা যেতে পারে। তবে খালি পেটে না করাই ভালো। হালকা খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর ব্যায়াম করলে ভালো ফল মেলে।
এই ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্ম আপ দরকার?
হ্যাঁ, হালকা স্ট্রেচিং বা জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁটা বা দৌড়ের অনুকরণে ২-৩ মিনিট সময় দিলে শরীর প্রস্তুত হয়, চোট লাগার আশঙ্কাও কমে।
কোন বয়সের মানুষ এই ব্যায়ামগুলো করতে পারেন?
১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সি সুস্থ ব্যক্তিরা এই ব্যায়ামগুলি করতে পারেন। তবে যদি কোনও চিকিৎসাজনিত সমস্যা থাকে, আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিদিন একই ব্যায়াম করলে কি শরীর তাড়াতাড়ি অভ্যস্ত হয়ে যায়?
হ্যাঁ, তাই মাঝে মাঝে ব্যায়ামের ধরন বা repetitions পরিবর্তন করাই ভালো। এতে শরীর নতুন চ্যালেঞ্জ পায় ও আরও কার্যকর হয়।
মেদ কমাতে শুধু ব্যায়াম করলেই চলবে?
শুধু ব্যায়াম নয়, সঙ্গে সুষম খাদ্যাভ্যাস, যথেষ্ট ঘুম এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকা জরুরি। ব্যায়ামের পাশাপাশি এগুলো মেনে চললে দ্রুত ও স্থায়ী ফল পাওয়া যায়।
এই ব্যায়ামগুলো করতে কোনও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়?
না, এই ব্যায়ামগুলির জন্য বাড়িতে থাকা সাধারণ চেয়ার বা দেয়াল ছাড়া কোনও আলাদা যন্ত্রপাতির দরকার পড়ে না।
দিনে ঠিক কতক্ষণ ব্যায়াম করাই যথেষ্ট?
প্রতিদিন ২০ মিনিট নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করলেই বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে ধীরে ধীরে সময় ও repetitions বাড়ানো যেতে পারে।
কতোদিনে ফল পাওয়া যায়?
ব্যক্তিভেদে ফলাফলের সময় ভিন্ন হতে পারে। তবে নিয়মিত ব্যায়াম ও সঠিক ডায়েট মেনে চললে ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যেই পরিবর্তন অনুভব করা যায়।