নিম্নচাপের খবর ঘিরে রাজ্যে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ধেয়ে আসতে পারে অতি ভারী বৃষ্টি ও ঝড়বৃষ্টি, সতর্ক রাজ্য প্রশাসন।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: নিম্নচাপের খবর নিয়ে রাজ্যে ফের ছড়াল উদ্বেগ। বঙ্গোপসাগরের উপরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত শক্তি বাড়িয়ে তৈরি করছে নিম্নচাপ, যার জেরে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ — সমস্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মুখ্যসচিবের সতর্কবার্তা ও আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস দেখে রাজ্য প্রশাসন এখন তৎপর। কী হবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায়? কোন জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে? বিস্তারিত থাকছে নিচে।
নিম্নচাপের খবর: রাজ্যের কোন ৭ জেলা সর্বাধিক ঝুঁকিতে?
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার থেকেই দুর্যোগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যের ৭টি জেলা — পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
এই জেলাগুলির জেলাশাসকদের আগাম সতর্কতা জারি করেছেন মুখ্য সচিব। আবহাওয়া দফতরের বক্তব্য অনুযায়ী, এই জেলাগুলিতে নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিম্নচাপের খবর: কী বলছে আবহাওয়া দফতর?
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী:
- আজ বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির শুরু।
- রবিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে চলবে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
- উত্তরবঙ্গে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে।
নিম্নচাপের সম্ভাব্য প্রভাব:
- নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাবে
- নিচু এলাকায় জল জমে যাবে
- কিছু অঞ্চলে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে
সমুদ্রের উপর সতর্কতা: মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ নির্দেশ
নিম্নচাপের খবর অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকবে বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত। তাই আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দমকা হাওয়ার গতিবেগ ৩০–৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
রাজ্য সরকারের প্রস্তুতি ও নির্দেশনা
নজরদারি ও ব্যবস্থাপনা:
- সেচ দফতর ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
- জেলা প্রশাসনকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য সচিব।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার পূর্বাভাস (আজ থেকে সোমবার পর্যন্ত)
দিন | আবহাওয়া পরিস্থিতি |
---|---|
বৃহস্পতিবার | মেঘলা আকাশ, দফায় দফায় বৃষ্টি |
শুক্রবার | ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা |
শনিবার | একইরকম বৃষ্টিপাত ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া |
রবিবার | অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা |
সোমবার | বৃষ্টি কিছুটা কমলেও দুর্যোগের আশঙ্কা |
উত্তরবঙ্গের জন্য সতর্কতা
যদিও আজ উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, তবে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
কলকাতার পরিস্থিতি
নিম্নচাপের খবর অনুযায়ী কলকাতায় আজ মেঘলা আকাশ ও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কাল, অর্থাৎ শুক্রবার, ভারী বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরম ও অস্বস্তি থাকবে।
নিম্নচাপ নিয়ে কী কী সতর্কতা মানতে হবে? (চেকলিস্ট)
- নীচু এলাকার বাসিন্দারা আগেভাগে নিরাপদ স্থানে যান
- অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে বেরোবেন না
- বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে থাকুন
- প্রয়োজনে নিকটস্থ ত্রাণ শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
- মাছ ধরার কাজ থেকে বিরত থাকুন
আগামী ৪৮ ঘণ্টা গোটা রাজ্যের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নচাপের খবর প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টি ও প্লাবনের সম্ভাবনা থাকায়, নাগরিকদের সচেতন থাকা ও প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা জরুরি।
রাজ্যের মানুষ যেন এই দুর্যোগে অপ্রস্তুত না থাকেন, সেজন্য প্রশাসন সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।
রাজ্যে ফের আবহাওয়ার বদলের ইঙ্গিত, বাড়ছে ঝুঁকি ও জলস্তর
বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে রাজ্যে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে আবহাওয়ার এই রকম রূপ বদল বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিকে চাপে ফেলেছে। নদী, খাল ও নিচু অঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যেই জলস্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাস বলছে, এই ধরণের জলবায়ুর পরিবর্তন আগামী দিনে আরও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে চাষাবাদ, যাতায়াত এবং জনজীবনের উপরে।
সাধারণ মানুষকেও এই সময় সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ পরিস্থিতির হঠাৎ রূপ বদলের ফলে অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, রাস্তা ভেঙে যাওয়া বা টানা বৃষ্টির কারণে জল জমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে মৎস্যজীবী, নৌচালক ও নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে থাকতে হবে। নদীগুলির গতিপথ ও জলস্ফীতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে নিয়মিত।
পাশাপাশি, রাজ্য প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এই সময় যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
জমে থাকা জল, দমকা হাওয়া এবং বিক্ষিপ্ত বজ্রপাতের কারণে জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। তাই আবহাওয়ার আপডেট নিয়মিত দেখে নেওয়া, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা, এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ মজুত রাখা এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহস রেখে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিম্নচাপের খবর সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
নিম্নচাপের খবর অনুযায়ী আগামী কয়েক দিনে কোন কোন জেলায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে?
নিম্নচাপের খবর অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং ঝাড়গ্রাম জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই জেলাগুলির নিচু এলাকায় জল জমার সম্ভাবনাও রয়েছে।
নিম্নচাপের ফলে কী ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে?
নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র হবে উত্তাল, বইবে দমকা ঝোড়ো হাওয়া। নদীর জলস্তর বাড়তে পারে এবং নিম্নভূমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ দফায় দফায় বৃষ্টিপাত চলবে।
মৎস্যজীবীরা কি সমুদ্রে যেতে পারবেন?
না, নিম্নচাপের খবর অনুযায়ী ২৭ জুলাই পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমুদ্রের পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
কলকাতায় নিম্নচাপের প্রভাব কতটা পড়বে?
কলকাতায় বৃহস্পতিবার থেকে মেঘলা আকাশ এবং হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকায় গরম ও অস্বস্তি থাকতে পারে।
রাজ্য সরকার কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে?
নিম্নচাপের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকার সেচ দফতর ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে সতর্ক থাকতে বলেছে। জেলা প্রশাসনগুলিকে আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পিছিয়ে না পড়ে।