নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: সুকান্ত মজুমদার গ্রেফতার,ভবানীপুরের রাজপথে রবিবার দুপুরে তৈরি হল এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি। রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলল লন্ডনের কেলগ কলেজের ঘটনার রেশ। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং কেলগ-প্রতিবাদী চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ ঘিরে আচমকাই অশান্তি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে গ্রেফতার করা হয় দুইজনকেই। তাঁদের সঙ্গে আরও ২৫ জনকে আটক করেছে লালবাজার। পরিস্থিতি মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভবানীপুরে।
ভবানীপুরের রাস্তায় পুলিশের অ্যাকশন, গ্রেফতার সুকান্ত মজুমদার গ্রেফতার
ভবানীপুরে রবিবার দুপুরে রাজপথে ঘোরাফেরা করছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। উদ্দেশ্য ছিল হরিশ মুখার্জি রোডে থাকা চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাওয়া। এই সেই চিকিৎসক, যিনি লন্ডনের কেলগ কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে প্রশ্ন করেছিলেন। সুকান্ত তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে চাইলেও পুলিশ তাঁর পথ আটকে দেয়। পুলিশ জানায়, চিকিৎসক নাকি বাড়িতে নেই।
“হিটলারের থেকেও এগিয়ে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী” — বিস্ফোরক সুকান্ত
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ভূমিকায় কড়া আক্রমণ শানান সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, “হিটলারের আমলকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যিনি ৩০ বছর বিদেশে চিকিৎসা করে রাজ্যে ফিরেছেন, তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন?” তিনি আরও বলেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের মাথার ট্রিটমেন্ট করানো উচিত।”
চিকিৎসকের অভিযোগ: “ভয় দেখিয়ে কিছু হবে না, আমি কী ওরা জানে না!”
অন্যদিকে, চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুকান্তর সঙ্গে দেখা করব বলে মিষ্টি সাজিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়ে উঠল না।” তাঁর মন্তব্য, “আমাকে ভয় দেখিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। আমি কী, ওরা জানেই না। তবুও করেই চলেছে।” এই বক্তব্য ঘিরেই নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বিজেপির পাল্টা দাবি, পুলিশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার সময় বিজেপির তরফে স্পষ্ট দাবি তোলা হয়, চিকিৎসক বাড়িতেই ছিলেন এবং তিনি নিজেই হেঁটে এসেছেন সুকান্তর সঙ্গে দেখা করতে। বিজেপি ভিডিও-সহ প্রমাণ পেশ করে জানায়, সুকান্তকে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে। এরপরই দেখা যায়, মাঝরাস্তায় দু’জনের সাক্ষাৎ হতেই হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং পুলিশ তাঁদের দু’জনকেই আটক করে নিয়ে যায়।
লালবাজারের রিপোর্ট: মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার
এই ঘটনায় শুধু সুকান্ত ও চিকিৎসক নন, তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজার। আপাতত ভবানীপুর কাণ্ডে বিজেপি ও রাজ্য সরকারের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লন্ডনের ঘটনার পরে এবার কলকাতার রাজপথেও প্রশাসন বনাম বিজেপির সংঘাত সামনে এল।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা (লালবাজার সূত্রে)
ক্রমিক | নাম | পরিচয় |
---|---|---|
১ | সুকান্ত মজুমদার গ্রেফতার | বিজেপি রাজ্য সভাপতি |
২ | রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় | চিকিৎসক, কেলগ-প্রতিবাদী |
৩-২৫ | অন্যান্য | বিজেপি কর্মী ও সমর্থক |
কেলগ প্রশ্নকাণ্ডের রেশেই কি গ্রেফতার?
ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে লন্ডনের কেলগ কলেজ। সেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জনসমক্ষে প্রশ্ন করেছিলেন রজতশুভ্র। সেই ঘটনাতেই কি প্রশাসনের টার্গেট হয়ে গেলেন চিকিৎসক ও বিজেপি সভাপতি? প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। অনেকে মনে করছেন, এটি একটি প্রতিশোধমূলক অ্যাকশন। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তার কারণে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) — সুকান্ত মজুমদার গ্রেফতার নিয়ে
প্রশ্ন ১: সুকান্ত মজুমদারকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে?
উত্তর: সুকান্ত মজুমদার গ্রেফতার ভবানীপুরে চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় পুলিশ তাঁর পথ আটকায়। পরে দুইজনের সাক্ষাতের পর উত্তেজনা ছড়ালে, পুলিশ তাঁদের উভয়কে আটক করে এবং লালবাজারে নিয়ে যায়। এরপর লালবাজার জানায়, তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রশ্ন ২: গ্রেফতারের সময় চিকিৎসক রজতশুভ্র কোথায় ছিলেন?
উত্তর: তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন বলে দাবি করেন। বিজেপির তরফে ভিডিও দিয়ে প্রমাণ দেওয়া হয় যে তিনি বাড়িতে ছিলেন এবং পরে নিজেই হেঁটে এসে সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেন।
প্রশ্ন ৩: পুলিশের তরফে মোট কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
উত্তর: লালবাজার সূত্র অনুযায়ী, সুকান্ত মজুমদার, চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪: এই গ্রেফতারের পেছনে কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে?
উত্তর: বিজেপি দাবি করছে, লন্ডনের কেলগ কলেজে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় চিকিৎসক রজতশুভ্রকে টার্গেট করা হয়েছে, এবং সুকান্ত মজুমদারের এই সাক্ষাৎ সেই কারণেই বাধা পেয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি মেলেনি।
প্রশ্ন ৫: “সুকান্ত মজুমদার গ্রেফতার” ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কী প্রতিক্রিয়া?
উত্তর: এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক চর্চা চলছে। বিজেপি এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলছে, অন্যদিকে প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তাজনিত কারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।