বৃষ্টির মরশুমে আবার চোখ রাঙাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের আকাশ! কোথায় ভারী বৃষ্টি, কোথাও ঝোড়ো হাওয়া—আপনার জেলায় কী পরিস্থিতি, জেনে নিন একঝলকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া প্রতিদিন সকালেই আকাশের মুখ ভার, কোথাও হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি, কোথাও আবার বজ্র-বিদ্যুৎ-সহ ঝমঝমে বর্ষণ—এই রকম চিত্রই দেখা যাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ায়। নিম্নচাপ দুর্বল হলেও তার দোসর ঘূর্ণাবর্ত এখনো সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী ক’দিন বৃষ্টির রেশ থেকে মুক্তি মিলছে না।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া: কোথায় কেমন পরিস্থিতি?
দক্ষিণ ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন অঞ্চলের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ক্রমশ দুর্বল হয়ে এসেছে, তবে এখনও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫.৮ কিমি উচ্চতায় উত্তর ছত্তীসগঢ়ের আকাশে রয়ে গেছে সক্রিয় ঘূর্ণাবর্ত। এর ফলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরেও এর প্রভাব বজায় রয়েছে।
আরও বড় চিন্তার বিষয় হল, বর্তমানে একাধিক মৌসুমি অক্ষরেখা রাজ্যের উপর দিয়ে বিস্তৃত। একটি লাইন বিস্তৃত রয়েছে বিকানের, হামিরপুর, ডালটনগঞ্জ, জামশেদপুর হয়ে দিঘা পর্যন্ত। অপর একটি রেখা আরব সাগর থেকে ছত্তীসগঢ় পর্যন্ত বিস্তৃত। এ সকল রেখার সম্মিলিত প্রভাবেই আবার মাথা চাড়া দিচ্ছে বৃষ্টি।
বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ বহু জেলায়
আগামী রবিবার ও সোমবার কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট অনুযায়ী, রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য জেলাসমূহ:
- দক্ষিণ ২৪ পরগনা
- পূর্ব মেদিনীপুর
- পশ্চিম মেদিনীপুর
- ঝাড়গ্রাম
- পুরুলিয়া
- বাঁকুড়া
- পশ্চিম বর্ধমান
- কলকাতা
বেগবর্ধিত ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে শহরে
শহর কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আগামী রবিবার ও সোমবার ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। তাই দরকার ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
উত্তরবঙ্গেও বাড়ছে বৃষ্টির সম্ভাবনা
শুধু দক্ষিণবঙ্গেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলেও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে আগামী রবিবার থেকে শুরু হতে পারে প্রবল বর্ষণ এবং তা চলতে পারে অন্তত বুধবার পর্যন্ত।
মৎস্যজীবীদের জন্য আপাতত কোনও সতর্কতা নেই
যদিও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কার্যকলাপ রয়েছে, তবু সমুদ্র এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। ফলে মৎস্যজীবীদের জন্য এখনই কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে দ্রুত সতর্ক বার্তা দেওয়া হবে।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট: জেলাভিত্তিক পূর্বাভাস (তালিকা)
জেলা | সম্ভাব্য বৃষ্টির ধরণ | ঝোড়ো হাওয়া |
---|---|---|
দক্ষিণ ২৪ পরগনা | ভারী বৃষ্টি | ৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা |
পূর্ব মেদিনীপুর | বজ্র-সহ বৃষ্টি | ৩০ কিমি/ঘণ্টা |
পশ্চিম মেদিনীপুর | ভারী বর্ষণ | ৪০ কিমি/ঘণ্টা |
কলকাতা | বজ্রবৃষ্টি | ঝোড়ো হাওয়া সম্ভাব্য |
পুরুলিয়া | ভারী বৃষ্টি | হালকা ঝোড়ো হাওয়া |
বাঁকুড়া | মাঝারি বৃষ্টি | — |
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি | ভারী বৃষ্টি | — |
এখন কী করণীয়?
- ছাতা বা রেইনকোট ছাড়া বাইরে না বেরোনোই ভালো
- পুরনো বাড়িতে থাকলে ছাদ বা চাল পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার
- অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে নিম্নাঞ্চলে জল জমার সম্ভাবনা আছে, সেদিকে সতর্ক নজর রাখা জরুরি
- প্রতিদিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে বাইরে বেরোন
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া এখনও স্থিতিশীল নয়। নিম্নচাপের জায়গা নিলেও ঘূর্ণাবর্ত ও অক্ষরেখার সংমিশ্রণ রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে বৃষ্টির আশঙ্কা। তাই বৃষ্টির ছুটির এই মরশুমে সাবধানতা ও প্রস্তুতি—দু’টিই জরুরি।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQ) দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া সম্পর্কে
দক্ষিণবঙ্গের কোন জেলাগুলিতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে?
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, এবং কলকাতায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা কতটা?
কলকাতা এবং আশেপাশের জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে সতর্কতা জারি হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের কোন জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে?
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার—এই জেলাগুলিতে রবিবার থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এই মুহূর্তে মৎস্যজীবীদের জন্য কোনও সতর্কতা আছে কি?
না, আপাতত সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে মৎস্যজীবীদের জন্য কোনও সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে পরিস্থিতি বদলালে সতর্কতা জারি হতে পারে।
বৃষ্টিপাত কতদিন পর্যন্ত চলতে পারে?
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে অন্তত বুধবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বজায় থাকতে পারে।
বৃষ্টির সময় কী কী সাবধানতা নেওয়া উচিত?
বৃষ্টির সময় ছাতা বা রেইনকোট ব্যবহার, ছাদ বা চালের অবস্থা পরীক্ষা করা, বিদ্যুৎচালিত জায়গা থেকে দূরে থাকা এবং আবহাওয়ার খবর অনুযায়ী চলাফেরা করা উচিত।
কলকাতায় ঠিক কখন বৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি?
রবিবার এবং সোমবার কলকাতায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
বর্তমানে রাজ্যে নিম্নচাপ সক্রিয় আছে কি?
নিম্নচাপ দুর্বল হলেও তার দোসর ঘূর্ণাবর্ত এখনো সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে, যার কারণে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
এই মৌসুমি বৃষ্টির সঙ্গে কোন অক্ষরেখাগুলি জড়িত?
বিকানের, হামিরপুর, ডালটনগঞ্জ, জামশেদপুর হয়ে দিঘা পর্যন্ত বিস্তৃত মৌসুমি অক্ষরেখা এবং আরব সাগর থেকে ছত্তীসগঢ় পর্যন্ত বিস্তৃত অন্য একটি অক্ষরেখা এর সঙ্গে যুক্ত।
বৃষ্টিপাত চলাকালীন বিদ্যুৎস্পৃষ্টের আশঙ্কা কেমন?
বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় বা ধাতব জিনিসের কাছাকাছি না থাকাই ভালো। ঘরে থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ।