শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা নিয়ে বাংলায় তুমুল বিতর্ক। কেন্দ্রের নির্দেশ মানবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিল তৃণমূল।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: শিঙাড়া-জিলিপির মতো প্রিয় তেলেভাজা খাবার নিয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। তবে মমতার বাংলায় এই নিয়ম মানা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিল তৃণমূল। কেন্দ্র বলছে, এই খাবারে ফ্যাট ও চিনি কত থাকে, তা মানুষকে জানানোর জন্য ক্যাফেটেরিয়া ও জনবহুল এলাকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞাপন দিতে হবে। কিন্তু তৃণমূল মনে করছে, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্র, যা বাংলায় মানা হবে না।
শিঙাড়া-জিলিপির উপর কেন নজর কেন্দ্রের
কেন্দ্রের অধীনে থাকা অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড সম্প্রতি জানিয়েছে, শিঙাড়া, জিলিপি, গুলাবজামুন, বড়াপাও, পকোড়া, চিপসের মতো খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট এবং চিনি থাকায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য অসুখের ঝুঁকি বাড়ছে। একজন মানুষ যদি জানেন একটি গুলাবজামুনে প্রায় ৬ চামচ চিনি থাকে, তাহলে সেই খাবার খাওয়ার আগে দু’বার ভাববেন। সেই কারণেই স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং জনবহুল স্থানে এই ধরনের খাবারের ক্ষতির কথা জানানোর জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
তৃণমূলের কড়া অবস্থান: বাংলায় ফতোয়া চলবে না
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, শিঙাড়া-জিলিপি খাওয়া মানুষের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। কে কীভাবে খাবেন, তা নিয়ে বাংলায় কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না। কুণাল ঘোষ আরও বলেন, কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা আসলে ফতোয়া ছাড়া কিছু নয়। শিঙাড়া-জিলিপিকে সিগারেটের সঙ্গে তুলনা করে সতর্কীকরণ দেওয়ার কথা বলা মানে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় এই ধরনের ফতোয়া মানা হবে না।
‘শিঙাড়া জিলিপি নির্দেশিকা’ নিয়ে বিতর্কে কী রয়েছে
এই নির্দেশিকায় শিঙাড়া-জিলিপি বা অন্য খাবার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, স্কুল, কলেজে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি ক্যাফেটেরিয়া, রাস্তার ধারে দোকান বা যেসব জায়গায় মানুষ বেশি যান, সেখানে এই খাবারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বোর্ড বা পোস্টারের মাধ্যমে মানুষকে জানাতে হবে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মানুষ যেন বুঝতে পারে কতটা ফ্যাট বা চিনি তারা প্রতিদিন খাচ্ছেন, এবং তার কারণে কী কী স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
শিঙাড়া-জিলিপির ক্ষতি কি সত্যিই এতটাই বড়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত তেলে ভাজা এবং চিনি যুক্ত খাবার বেশি খেলে হৃদরোগ, স্থূলতা, রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই ধরনের অসুখ বাড়ছে। তাই মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এই কারণে এই খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে, এমন নির্দেশিকা কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া হয়নি।
শিঙাড়া-জিলিপি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের অবস্থান এক নজরে
দিক | কেন্দ্রের অবস্থান | রাজ্যের অবস্থান |
---|---|---|
উদ্দেশ্য | স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি | খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ নয় |
কী করতে বলা হয়েছে | বিজ্ঞাপন ও সতর্কীকরণ | মানা হবে না |
খাবার নিষিদ্ধ? | নয় | নয় |
লক্ষ্য | হৃদরোগ ও অসুখ রোধ | মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা |
শিঙাড়া-জিলিপি ইস্যুতে বাংলার মানুষের প্রতিক্রিয়া
রাজ্যের মানুষ এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক থেকে কেন্দ্রের পদক্ষেপ সঠিক, আবার অনেকেই বলছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। অনেক দোকানদারদের বক্তব্য, যদি মানুষ নিজের ইচ্ছায় খায়, তবে তাতে হস্তক্ষেপ করা সরকারের উচিত নয়।
কী হবে শিঙাড়া-জিলিপির ভবিষ্যৎ
তৃণমূল স্পষ্ট জানিয়েছে, বাংলায় এই নির্দেশিকা মানা হবে না। ফলে পশ্চিমবঙ্গে শিঙাড়া-জিলিপির বিক্রিতে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়তো তেলেভাজার পরিমাণ কমাতে শুরু করবেন। অন্যদিকে, কেন্দ্র যদি এই বিষয়ে আরও কড়া পদক্ষেপ নেয়, তবে রাজ্য বনাম কেন্দ্র সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে।
FAQ জিলিপি সিঙ্গারা নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশিকা সম্পর্কে
শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা কী নিয়ে জারি হয়েছে?
শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা হল কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক পদক্ষেপ, যেখানে তেলে ভাজা ও মিষ্টি খাবারে থাকা ফ্যাট এবং চিনি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা জানিয়ে সতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো সমস্যা বাড়ছে, যা নিয়মিত ফ্যাট ও চিনি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।
তৃণমূল শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা মানতে চাইছে না কেন?
তৃণমূলের মতে, শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা মানুষের ব্যক্তিগত খাদ্যাভাসে হস্তক্ষেপ করছে, তাই মমতার নেতৃত্বাধীন বাংলায় এই নির্দেশিকা মানা হবে না বলে তৃণমূল জানিয়েছে।
শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকায় কি এই খাবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
না, শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকায় এই খাবার নিষিদ্ধ করা হয়নি। শুধুমাত্র এই খাবারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন ও সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানোর কথা বলা হয়েছে।
শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা কাদের জন্য প্রযোজ্য?
শিঙাড়া-জিলিপি নির্দেশিকা মূলত স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এবং জনবহুল স্থানে প্রযোজ্য, যেখানে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই নির্দেশিকা জারি হয়েছে।