BREAKING NEWS

কোন জাতের আম স্বাদে সেরা? জেনে নিন হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি সহ জনপ্রিয় জাতগুলোর স্বাদের পার্থক্য

কোন জাতের আম স্বাদে সেরা, জানুন হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগসহ সেরা আমের তালিকা
কোন জাতের আম স্বাদে সেরা?” — গ্রীষ্মের সেরা ১০ আমের স্বাদ, ঘ্রাণ ও বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক তালিকা এই প্রতিবেদনে।
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: দেশজুড়ে গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হতেই বাজার ভরে উঠেছে রকমারি জাতের আমে। ফলের রাজা বলে খ্যাত এই ফলের স্বাদ ও গন্ধে মজে উঠেছে আপামর বাঙালি। তবে এমন এক প্রশ্ন বহু মানুষের মনে ঘোরাফেরা করে, “কোন জাতের আম স্বাদে সেরা?” কারণ বাজারে একের পর এক নাম—গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, আম্রপালি… কোনটা খাবেন, আর কোনটা সত্যিকারের রাজা, এই নিয়ে ধন্দে থাকেন অনেকে। তবে চলুন আজ আমরা হাতের লেখার মতো করে এক প্রতিবেদনে জেনে নিই কোন কোন জাতের আম মানুষের স্বাদের বিচারেই একেবারে উপরের সারিতে।

কোন জাতের আম স্বাদে সেরা প্রশ্নের উত্তর কি সহজে দেওয়া যায়?

এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই থাকে, কিন্তু এর সহজ উত্তর নেই। কারণ প্রতিটি মানুষের স্বাদের অনুভব আলাদা। কেউ মিষ্টি ঘন শাঁসের হিমসাগরে মজে যান, তো কেউ পছন্দ করেন সুঘ্রাণযুক্ত ল্যাংড়া। কেউবা আবার হাঁড়িভাঙার রসালো গঠন আর দীর্ঘস্থায়ী টেস্টে খুশি হন। তবে বাজারের চাহিদা ও সাধারণ মানুষের পছন্দ বিচার করে কিছু জাতকে স্বাদের দিক থেকে শীর্ষে রাখা যায়।

হিমসাগর আম কি স্বাদে সেরা?

হিমসাগর নামটি বললেই চোখে ভেসে ওঠে একটি সবুজাভ, মসৃণ চেহারার সুগন্ধযুক্ত মিষ্টি আম। এই জাতটি পশ্চিমবঙ্গের Nadia ও Murshidabad অঞ্চলের গর্ব। হিমসাগর আমের শাঁস কমলা, আঁশবিহীন ও অতুলনীয় মিষ্টি। একে অনেকে বাংলাদেশের “ক্ষীরশাপাতি” বলেও চেনেন। জুন মাসে এই আমের মৌসুম শুরু হয় এবং বাজার দখল করে তার পরবর্তী দুই সপ্তাহ।

গোপালভোগ – সবার আগে বাজারে, স্বাদেও পিছিয়ে নয়

গ্রীষ্মের শুরুতেই বাজারে গোপালভোগ আসে। আকারে মাঝারি, নিচের দিকটা একটু সরু এবং গায়ে থাকে হালকা হলুদ ছোপ। এই আমটি খেতে খুব মিষ্টি, আঁশ নেই এবং শাঁস নরম। পাকা অবস্থায় রং হয় হলুদাভ সবুজ। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে বাজারে পাওয়া যায় এই জাতের আম।

ল্যাংড়া আম কেন এখনো মানুষের প্রথম পছন্দ?

শুধু নামেই নয়, গন্ধে-স্বাদে অনন্য ল্যাংড়া। এর রং পাকা অবস্থাতেও সবুজ থাকে, তাই অনেকেই বিভ্রান্ত হন। তবে স্বাদে এই আম অতুলনীয়, সুঘ্রাণে পূর্ণ এবং শাঁস হলুদাভ। জুনের শুরু থেকেই বাজারে দেখা যায় এই জাতটি। অনেকে বলেন, একবার ল্যাংড়া খেলে হিমসাগরের কথাও ভুলে যেতে হয়!

হাঁড়িভাঙা আমের বিশেষত্ব কী?

হাঁড়িভাঙা আম চেনা যায় তার উপরিভাগের মোটা গঠন ও নিচের সরু অংশ দেখে। পাকা আম খোসায় কুঁচকে গেলেও পঁচে না, এই বৈশিষ্ট্য একে আলাদা করে তোলে। স্বাদে টক-মিষ্টি ও ঘন মাংসালো শাঁস এই জাতের মূল আকর্ষণ। জুন মাসের দশ তারিখের পর থেকেই হাঁড়িভাঙা বাজারে ভরে ওঠে।

আম্রপালি – মিষ্টির রাজা, টিকে থাকে অনেকদিন

ছোট থেকে মাঝারি আকারের এই আমের খোসা মসৃণ ও তেলতেলে। নিচে সুঁচালো আর ওপরে গোলাকৃতি। আম্রপালি পাকা অবস্থায় হলুদাভ সবুজ রং ধারণ করে। শাঁস ঘন কমলা, রসালো ও অত্যন্ত মিষ্টি। একে অনেকদিন ফ্রিজ ছাড়াও সংরক্ষণ করা যায়। জুনের ২০ তারিখের পর এই জাত বাজারে আসে।

লক্ষণভোগ বা লখনা আম চেনার উপায় কী?

এই আমের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, এর নাক মাঝামাঝি জায়গায় থাকে। বোঁটার পাশে থাকে লালচে ছোপ। স্বাদে যদিও হিমসাগরের মতো মিষ্টি নয়, তবে ঘ্রাণে খুবই আকর্ষণীয়। রঙ উজ্জ্বল হলুদ হওয়ায় সহজেই চেনা যায়। ল্যাংড়ার সঙ্গে একই সময়ে বাজারে আসে এই জাতটি।

আশ্বিনা ও ফজলি – বড় আকৃতির রাজা

এই দুই জাতের আম দেখতে প্রায় একই, তবে আশ্বিনা কালচে সবুজ এবং ফজলি খানিকটা হলুদাভ। স্বাদেও কিছুটা পার্থক্য—আশ্বিনা টক-মিষ্টি আর ফজলি হালকা টকগন্ধযুক্ত মিষ্টি। সাধারণত জুলাই মাসের দিকে এই আমের আবির্ভাব ঘটে বাজারে।

কাটিমন – বারোমাসি স্বাদের পসরা

এখন দেশের নানা প্রান্তে চাষ হচ্ছে বারোমাসি কাটিমন আম। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া যায়। পাকা অবস্থায় এর রং হয় উজ্জ্বল হলুদ এবং গন্ধে থাকে এক বিশেষ স্নিগ্ধতা। ছোটখাটো গড়নের এই আম চাষেও লাভজনক ও রক্ষণাবেক্ষণে সহজ।

স্বাদের দিক থেকে সেরা ১০ জাতের আমের তালিকা

ক্রমআমের নামমৌসুম শুরুরঙ/চেহারাস্বাদ ও বৈশিষ্ট্য
হিমসাগরজুন ১ম সপ্তাহসবুজ, আঁশবিহীনঅতিমিষ্ট, সুঘ্রাণযুক্ত
গোপালভোগমে ৩য় সপ্তাহহলুদাভ সবুজমিষ্টি, আঁশ নেই
ল্যাংড়াজুন ৬সবুজ, সুঘ্রাণযুক্তখুব মিষ্টি, নরম শাঁস
হাঁড়িভাঙাজুন ১০মোটা চওড়া, নিচে সরুমাংসালো, রসালো
আম্রপালিজুন ২০হলুদাভ সবুজ, ছোট আকৃতিঅনেক মিষ্টি, দীর্ঘস্থায়ী
লক্ষণভোগজুন ৬উজ্জ্বল হলুদ, লাল ছোপসুঘ্রাণ, কম মিষ্টি
ফজলিজুলাইসবুজ-হলুদ, বড় আকারটকগন্ধযুক্ত মিষ্টি
আশ্বিনাজুলাইকালচে সবুজ, বড় আকারটক-মিষ্টি
কাটিমনমার্চ-অক্টোবরউজ্জ্বল হলুদমিষ্টি, বারোমাসি
১০ক্ষীরশাপাতিজুন ১ম সপ্তাহসবুজহিমসাগরেরই সমজাতীয়

কোন জাতের আম খাওয়া নিরাপদ ও স্বাদে সেরা?

এই প্রশ্নটিই এখন বাজারে সবচেয়ে বেশি শোনা যায়। কারণ অনেকেই রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম থেকে দূরে থাকতে চান। এ জন্য গন্ধ, রং ও খোসার দেখেই কিছুটা অনুমান করা যায় কোন আম প্রাকৃতিকভাবে পাকা। স্বাদের দিক থেকে হিমসাগর ও ল্যাংড়া অনেকেই সেরা মনে করেন, তবে নিরাপদে খেতে চাইলে দেশি চাষিদের কাছ থেকে কেনা মৌসুমি আম-ই বেছে নেওয়া শ্রেয়।

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQ)

কোন জাতের আম স্বাদে সেরা?

বেশিরভাগ মানুষের মতে হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম স্বাদে সেরা। কারণ এই দুই জাতের শাঁস মিষ্টি, আঁশবিহীন এবং গন্ধে অতুলনীয়। তবে ব্যক্তিভেদে পছন্দ ভিন্ন হতে পারে।

হিমসাগর আম কেন এত জনপ্রিয়?

হিমসাগর আম খোসায় পাতলা, শাঁসে আঁশ নেই, এবং অতিরিক্ত মিষ্টি ও সুঘ্রাণযুক্ত। স্বাদের জন্য একে অনেকেই “ফলের রাজা” বলে থাকেন। জুন মাসে এটি বাজারে পাওয়া যায়।

কোন আম রাসায়নিক ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে পাকে?

গোপালভোগ, হিমসাগর, ও ল্যাংড়া জাতের দেশি আম সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাকানো হয়, বিশেষ করে যেগুলো স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে কেনা হয়। বেশি ঘ্রাণ ও খোসার প্রাকৃতিক দাগ দেখে চিনে নেওয়া যায়।

হাঁড়িভাঙা আমের বিশেষত্ব কী?

হাঁড়িভাঙা আম দেখতে মোটা ও নিচে সরু ধরনের হয়। এর খোসা কুঁচকে গেলেও সহজে পঁচে না। মাংসালো এবং রসালো শাঁসের জন্য এই আমের স্বাদও বেশ চমৎকার।

আম্রপালি আম কতদিন ভালো থাকে?

আম্রপালি আম ফ্রিজ ছাড়াও কয়েক দিন ভালো থাকে। এর খোসা মসৃণ ও শাঁস কমলা ও অতিমিষ্ট। এটি জুন মাসের শেষ দিকে বাজারে আসে।

গোপালভোগ আম কবে বাজারে আসে?

প্রতি বছর মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই বাজারে গোপালভোগ আম আসতে শুরু করে। এটি মৌসুমের প্রথম দিকের অন্যতম জনপ্রিয় জাত।

স্বাদের পাশাপাশি কোন আম স্বাস্থ্যকর?

যে আম রাসায়নিক ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে পাকে, সেগুলোই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। যেমন – হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ ইত্যাদি দেশি জাতের আম স্থানীয় উৎস থেকে কিনলে নিরাপদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর হয়।

Leave a Comment