মাত্র তিন সেকেন্ডেই বন্ধ হয়ে গেল বিমানটির জ্বালানি! দুর্ঘটনার আগেই ছিল আন্তর্জাতিক সতর্কতা, তবুও উপেক্ষা—ফাঁস হলো ভয়াবহ তথ্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন, বেঙ্গল জব স্টাডি: এয়ার ইন্ডিয়া আহমেদাবাদ ক্র্যাশ
মাত্র তিন সেকেন্ডেই বন্ধ হয়ে গেল জ্বালানি! এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আগেই ছিল আন্তর্জাতিক সতর্কতা, তবুও নেওয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা। ব্রিটেনের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (CAA) এমনকি মার্কিন FAA কয়েক সপ্তাহ আগেই সতর্ক করেছিল বোয়িং ৭৮৭-এ থাকা ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ বা জ্বালানি শাটঅফ ভালভের ত্রুটি নিয়ে। এখন যখন সেই সতর্কতার কথাই দুর্ঘটনার পরে প্রকাশ্যে এসেছে, গোটা বিমান শিল্প জুড়ে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য।
এয়ার ইন্ডিয়া আহমেদাবাদ ক্র্যাশের আগেই ছিল আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা
১৫ মে, ২০২৫—এই দিনেই যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (CAA) একটি গুরুত্বপূর্ন নিরাপত্তা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে উল্লেখ ছিল বোয়িং ৭৩৭, ৭৫৭, ৭৬৭, ৭৭৭ এবং ৭৮৭ বিমানে থাকা জ্বালানি শাটঅফ ভালভ অ্যাকচুয়েটর-এর মধ্যে একটি মারাত্মক সম্ভাব্য ত্রুটি থাকতে পারে, যা যদি উড়ানের সময় নড়ে যায়, তবে তা সরাসরি জ্বালানি বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে নির্দেশ দেয়া হয় প্রতিদিন প্রতিটি বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচ পরীক্ষা করার।
বিমান কোম্পানিগুলোর গাফিলতিই কি এই দুর্ঘটনার কারণ?
FAA বা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই বিপদের গুরুত্ব বুঝে ‘এয়ারওয়ার্দিনেস ডিরেক্টিভ’ জারি করেছিল, যাতে বোয়িং ৭৮৭ সহ অন্যান্য মডেলের জ্বালানি সুইচ লকিং ব্যবস্থা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করা হয়। অথচ সেই নির্দেশিকা কার্যকরভাবে মেনে চলেনি বহু সংস্থা।
১২ জুন ২০২৫-এ যখন এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 ফ্লাইট আহমেদাবাদে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়, এই সতর্কতা মানা হয়নি। এমনকী এতিহাদ এয়ারওয়েজ পর্যন্ত ১৩ জুলাই ২০২৫-এ একটি অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা দেয় তাদের বোয়িং ৭৮৭ বিমানের লকিং মেকানিজম তৎপরতার সাথে পরীক্ষা করতে।
AAIB-এর রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য: দুর্ঘটনার মুহূর্তে বন্ধ হয় জ্বালানি প্রবাহ
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB) জানিয়েছে, AI-171 ফ্লাইটের দুর্ঘটনার সময় জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ স্যুইচ উড়ানের তিন সেকেন্ড পর RUN থেকে CUTOFF-এ চলে যায়। পাইলটদের কথোপকথনে স্পষ্ট, একজন পাইলট চমকে উঠে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি জ্বালানি কেন বন্ধ করলেন?”, উত্তরে অন্যজন জানান, তিনি কিছুই করেননি।
এই ঘটনা বোঝায়, বোয়িং ৭৮৭-এর ফুয়েল স্যুইচে স্বয়ংক্রিয় নড়াচড়ার সম্ভাবনা থেকেই গিয়েছিল, যার ফলে বিমান উড়ান শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই থেমে যায় জ্বালানি প্রবাহ।
বোয়িং ৭৮৭ ফুয়েল কন্ট্রোল স্যুইচের বিপজ্জনক লকিং সিস্টেম
বোয়িং ৭৮৭-এ ব্যবহৃত ফুয়েল স্যুইচে এমন একটি লকিং সিস্টেম থাকে, যা RUN বা CUTOFF মোডে রাখে। কিন্তু এখনকার তদন্ত বলছে, এই লকিং সিস্টেম অনিচ্ছাকৃতভাবে সরলেও তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল না।
এই স্যুইচের কাজ কী?
- RUN মোডে জ্বালানি প্রবাহিত হয়।
- CUTOFF মোডে জ্বালানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়।
সেই CUTOFF অবস্থাতেই পৌঁছে যাওয়াতেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয় বলে ধরা হচ্ছে।
CAA ও FAA-এর নির্দেশনা অনুযায়ী বোয়িং ৭৮৭-এ যে সমস্যা তুলে ধরা হয়েছিল
সংস্থা | নির্দেশনার তারিখ | নির্দেশনার বিষয়বস্তু |
---|---|---|
CAA (UK) | ১৫ মে ২০২৫ | বোয়িং ৭৮৭ সহ ৫টি মডেলের ফুয়েল ভালভ অ্যাকচুয়েটর পরীক্ষা |
FAA (USA) | মে ২০২৫ | প্রতিটি ফ্লাইটে স্যুইচ লকিং ব্যবস্থা পরীক্ষা |
AAIB (India) | ১২ জুলাই ২০২৫ | AI-171 ফ্লাইটে ৩ সেকেন্ডে জ্বালানি বন্ধ, পাইলট বিভ্রান্ত |
Etihad Airways | ১৩ জুলাই ২০২৫ | সব ৭৮৭ বিমানের লকিং ব্যবস্থা চেক করতে নির্দেশ |
এয়ার ইন্ডিয়া আহমেদাবাদ ক্র্যাশ
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন চারদিকে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এয়ার ইন্ডিয়া আহমেদাবাদ ক্র্যাশ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিমান প্রযুক্তিবিদ—সবার একটাই প্রশ্ন, এত স্পষ্ট করে আগাম বার্তা পাওয়া সত্ত্বেও কেন নেওয়া হয়নি তড়িৎ ব্যবস্থা? শুধুমাত্র ইঞ্জিন বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নয়, একটি ফুয়েল সুইচের কারণে একটি প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সত্যিই ভয়ঙ্কর।
শেষ কথা: এটাই কি ছিল মানবিক ভুল নাকি প্রযুক্তির ত্রুটি?
এখনো এই প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর মেলেনি, তবে এয়ার ইন্ডিয়া আহমেদাবাদ ক্র্যাশ কাণ্ডে বোঝা যাচ্ছে—বিপদের আগে সতর্কতা থাকলেও তা যথাসময়ে কার্যকর না করলে বিপর্যয় এড়ানো অসম্ভব। এখন বোয়িং সংস্থাও এই লকিং মেকানিজম নিয়ে পুনর্বিবেচনা শুরু করেছে, কারণ একটি ছোট সুইচের ভুলেই ঝরে যেতে পারে শত শত প্রাণ।
FAQ এয়ার ইন্ডিয়া আহমেদাবাদ ক্র্যাশ সম্পর্কে
প্রশ্ন: এয়ার ইন্ডিয়া আহমেদাবাদ ক্র্যাশ ঠিক কখন ঘটেছিল?
উত্তর: ১২ জুন, ২০২৫ তারিখে এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 ফ্লাইট আহমেদাবাদে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
প্রশ্ন: বোয়িং ৭৮৭-এর কোন যন্ত্রাংশটি নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে?
উত্তর: বোয়িং ৭৮৭ বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ স্যুইচ বা ফুয়েল শাটঅফ ভালভ অ্যাকচুয়েটর-এর উপরেই ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন: এই বিপদের ব্যাপারে আগে থেকেই কোনও আন্তর্জাতিক সতর্কতা ছিল?
উত্তর: হ্যাঁ, যুক্তরাজ্যের CAA এবং মার্কিন FAA – উভয় সংস্থাই মে ২০২৫-এ একটি করে নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল, যাতে এই জ্বালানি স্যুইচ প্রতিদিন পরীক্ষা করার নির্দেশ ছিল।
প্রশ্ন: দুর্ঘটনার সময় স্যুইচের কী অবস্থা ছিল?
উত্তর: ভারতের AAIB জানিয়েছে, উড়ানের তিন সেকেন্ড পরেই স্যুইচ RUN থেকে CUTOFF-এ চলে যায় এবং বিমানটি জ্বালানিহীন হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: পাইলটরা কি ইচ্ছাকৃতভাবে স্যুইচ বন্ধ করেছিলেন?
উত্তর: না, ককপিট অডিও থেকে বোঝা গেছে পাইলটদের একজন চমকে উঠেছিলেন এবং অন্যজন বলেন যে তিনি কিছুই করেননি, অর্থাৎ এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটেছে।
প্রশ্ন: বোয়িং সংস্থা কি এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে?
উত্তর: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ইতিমধ্যেই তাদের বোয়িং ৭৮৭ বিমানের লকিং সিস্টেম পরীক্ষা শুরু করেছে এবং বোয়িং সংস্থাও নতুন করে ডিজাইন পর্যালোচনা শুরু করেছে।